এক বাগান থেকেই ২৫ লাখ টাকার কমলা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ০৮:১৮ এএম, ০৯ জানুয়ারি ২০২৩

ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বিরহলী গ্রামের আবু জাহিদ মো. ইবনুল ইকরাম জুয়েল। গত ১১ বছর আগে কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামে ৩ বিঘা জমির উপরে করেছেন ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান ‘অরেঞ্জ ভ্যালি’। বাগানে আছে আড়াইশ গাছ।

অষ্টমবারের মতো চলতি মৌসুমের ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে কমলা সংগ্রহ। ১১ বছর আগে চারাগুলো জেলা হর্টিকালচার থেকে প্রতি চারা ৫ টাকা করে কিনেছিলেন তিনি। গত মৌসুমে আড়াইশ গাছ থেকে ১৫ লক্ষাধিক টাকার কমলা বিক্রি করছেন তিনি।

এক বাগান থেকেই ২৫ লাখ টাকার কমলা

বাগানের গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে বড় বড় কমলা। কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে গাছের ডালপালা। এ যেন এক নয়নাভিরাম ও মনমুগ্ধকর দৃশ্য। প্রাকৃতিক পরিবেশে এমন অপরূপ দৃশ্য দেখতে শীতকে উপেক্ষা করে স্থানীয়দের মতো প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ আসছেন বাগানে। এতে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে বাগানটি। দেখে অভিভূত ও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অনেকেই।

এসব কমলা বাগানেই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি দরে। কমলার বাগানটি হওয়ার ফলে যেমন পুষ্টি ও ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হচ্ছে; তেমনই বাগন রক্ষণাবেক্ষণে ২৫ জনের হয়েছে কর্মসংস্থান।

এক বাগান থেকেই ২৫ লাখ টাকার কমলা

বাগান দেখতে এসে দুর্নীতি দমন কমিশনের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. আব্দুল করিম বলেন, ‘অফিসিয়াল কাজে ঠাকুরগাঁওয়ে এসেছিলাম। অনেকের কাছে পীরগঞ্জে কমলার কথা শুনেছি। যাওয়ার পথে। দেশের মধ্যে এমন সফল বাগান করেছেন। এখানকার মতো অনেকেই এমন বাগান করতে পারেন।’

দিনাজপুর চিরির বন্দর থেকে আগত সিরাজুল মনি শুভ বলেন, ‘আমরা কয়েকজন মিলে এসেছি বাগানটি দেখেতে। দেখে খুবই অভিভূত হলাম, বাংলাদেশে এমন কমলা হতে পারে ভাবাই যায় না। আমরাও কয়েকজন মিলে এমন বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছি। এখান থেকেই চারা নিয়ে যাবো।’

এক বাগান থেকেই ২৫ লাখ টাকার কমলা

বাগান দেখতে এসেছিলেন ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক ও জেলা যুবলীগের উপদপ্তর সম্পাদক এস এম শাওন চৌধুরী। বাগান সম্পর্কে তার অনুভূতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি দার্জিলিংয়ে গিয়ে কমলা খেয়েছি। আজকে এখানকার কমলা খেলাম। এ কমলা স্বাদে-গুণে একই। আশা করি এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্যবস্থা নেবেন। তাহলে প্রতিটি উপজেলায় এমন বাগন গড়ে উঠবে।’

উদ্যোক্তা ও অরেঞ্জ ভ্যালির মালিক আবু জাহিদ মো. ইবনুল ইকরাম জুয়েল জাগো নিউজকে বলেন, ‘দার্জিলিং অরেঞ্জ কাল্টিভিশন অ্যান্ড ট্যুরিজম করার লক্ষ্যে এ বাগান করা। অর্গানিক পদ্ধতিতে বাগান করেছি। কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। গত মৌসুমে আড়াইশ গাছে ৩শ মণ কমলা ১৫ লাখ টাকায় বিক্রয় করেছি। এবার ২৫ লক্ষাধিক টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবো।’

এক বাগান থেকেই ২৫ লাখ টাকার কমলা

তিনি আরও বলেন, ‘১১ বছর আগে জেলা হর্টিকালচার থেকে প্রতিটি চারা ৫ টাকা করে ৩০০ চারা কিনেছিলাম। তখন আমার ৩ বিঘার বাগানে ৪ লাখ টাকা খরচ হয়। আমি আরও ২ বিঘা জমিতে নতুন করে কমলার চাষ শুরু করেছি। ২ বিঘা জমিতে মাল্টার ২০০ গাছ রোপণ করেছি। আগামী বছরে মাল্টা বাজারজাত করতে পারবো। এসব কমলা ও মাল্টা চাষ খুবই সহজ ও স্বল্প খরচে চাষ করা যায়। কেউ এমন বাগান করতে চাইলে সর্বপ্রকার সহযোগিতা করব।’

বাগানের শ্রমিক সুজন আলী ও সৌম দেব শর্মা বলেন, ‘বাগানে আমরা ২০-২৫ জন কাজ করি। যা বেতন পাই, তাতে সংসার ভালোই চলে। প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ আসে। বাগানের কমলা বাইরে নিয়ে বিক্রি করতে হয় না। যারা আসেন, তাদের চাহিদা অনুযায়ী কমলা দিতে পারছি না এবার।’

এ ফলের চাষ সম্প্রসারণে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন উপজেলা কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা লাইলা আঞ্জুমান বেগম।

জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে কমলা চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখানে শীত মৌসুমে অনেক দূর থেকে কমলা কিনতে ও খেতে আসছেন। এটিকে কেন্দ্র করে পর্যটনেরও সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। অন্যরাও জুয়েল সাহেবর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এমন কাজ করতে পারেন।’

তানভীর হাসান তানু/এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।