ফসলে কেন অনুখাদ্য প্রয়োজন
ফসলে অনুখাদ্য বা মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট প্রয়োজন। কারণ এগুলো উদ্ভিদের সঠিক বৃদ্ধি, বিকাশ এবং ফলনের জন্য অপরিহার্য। অনুখাদ্যগুলো উদ্ভিদের এনজাইম, হরমোন এবং ক্লোরোফিল গঠনে সহায়তা করে। এগুলো মাটি থেকে পুষ্টি শোষণ, ফুল ও ফল ধারণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যেমন দস্তা পাতার ক্লোরোফিল তৈরি ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, আয়রন ক্লোরোফিল সংশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ এবং বোরন ফুল ও ফলের গঠন উন্নত করে।
তাই ফসলে পরিমিত পরিমাণে অনুখাদ্য সরবরাহ করলে উৎপাদনশীলতা ও গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। একটি গাছের বেঁচে থাকতে ১৭টি উপাদান প্রয়োজন হয়। তাই সুষম সার বা মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট (অনুখাদ্য) ব্যবহার করা জরুরি। গাছে এই ১৭টি উপাদানের যে কোনো একটির অভাব থাকলে গাছ অল্প কিছুদিনের মধ্য আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যায় এবং বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ শুরু হয়।
গাছের অনুখাদ্যের অভাবে যেসব সমস্যা হয়
১. পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে, ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে
২. ফুল-ফল ঝরে পড়া
৩. ফলের আকার ছোট হয়ে যাওয়া
৪. গাছের বৃদ্ধি থেমে যাওয়া
৫. বিভিন্ন ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের আক্রমণ বেড়ে যায়।
তাই প্রতিটি গাছে অনুখাদ্য ব্যবহার জরুরি। গাছের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি উপাদান সঠিক অনুপাতে মিশিয়ে এই অনুখাদ্য তৈরি করা হয়। এটি প্রয়োগ করলে বাড়তি কোনো সার প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয় না। যা একবার ব্যবহার করলে আগামী ৪-৫ মাস আর কোনো সার ব্যবহার করতে হবে না। মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট উদ্ভিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাছের পরিচর্যা বলতে আমরা বুঝি, গাছের সার প্রয়োগ, পোকামাকড়ের সমস্যা দেখা দিলে কীটনাশক ব্যবহার এবং ছত্রাক ঘটিত সমস্যায় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে থাকি। একটি বিষয় আমরা অনেক সময় গুরুত্ব দিয়ে দেখি না। সেটি হলো, মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট বা অনুখাদ্য প্রয়োগ করা। এ অনুখাদ্য লাগে কম কিন্তু এর অভাবজনিত সমস্যা খুবই বড় এবং জাটিল।
মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট ফার্টিলাইজারের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী ভূমিকা
১. গাছের পাতা গাঢ় সবুজ করে মাত্র ৩-৪ দিনে
২. গাছ ঝিমিয়ে পড়লে দ্রুত সতেজ করে
৩. ফুলের রং ও অধিক পরিমাণে ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়
৪. সালোকসংশ্লেষণ কার্যক্রমে সহায়তা করে
৫. মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে
৬. গাছের শিকড়ের শক্তি বাড়ায়।
সঠিক পরিমাণে মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট ব্যবহার করলে গাছের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তাই সুষম মাত্রায় মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট ব্যবহার করলে গাছ হয়ে উঠবে সতেজ, সুন্দর ও প্রাণবন্ত। রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে যদিও এর ফলাফল খুবই দ্রুত পাওয়া যায়।
তবুও এর কিছু দুর্বল দিক রয়েছে
অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে গাছের শিকড়ের ক্ষতি হতে পারে। একই জমিতে দীর্ঘদিন রাসায়নিক সার ব্যবহার করার কারণে মাটিতে রাসায়নিকের উপস্থিতি বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির অনুজীব, যারা গাছের খাবার সরবরাহ করতে সহায়তা করে, তাদের ক্ষতি হয়।
এসইউ/জিকেএস