‘বন রক্ষায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নিবিড় সম্পৃক্ততা অপরিহার্য’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:১১ এএম, ২৪ মার্চ ২০২৩

বন রক্ষা ও বনজ সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা অপরিহার্য। এজন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর (সিএমসি) টেকসই আর্থিক সক্ষমতা নিশ্চিত করাও জরুরি।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে আরণ্যক ফাউন্ডেশন আয়োজিত সহ-ব্যবস্থাপনা দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।

২০০৮ সালের ২৩ মার্চ ভোরে শীলখালী সহ-ব্যবস্থাপনা সংগঠনের কমিউনিটি টহল দলের তরুণ সদস্য রফিকুল ইসলাম কক্সবাজারের টেকনাফ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে পাহারারত অবস্থায় বনদস্যুদের হাতে নিহত হন।

রক্ষিত এলাকার প্রকৃতি সংরক্ষণে রফিকুল ইসলামের আত্মত্যাগের স্মরণে ২০০৯ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিনটিকে বন অধিদপ্তর, রক্ষিত এলাকার আশপাশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী, নিসর্গ নেটওয়ার্কের সব সহ-ব্যবস্থাপনা সংগঠন ও উন্নয়ন সহযোগীরা যৌথভাবে সহ-ব্যবস্থাপনা দিবস পালন করে আসছে।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সার্কেলের বন সংরক্ষক মো. ইমরান আহমেদ বলেন, সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে বন ও প্রকৃতি রক্ষা কার্যক্রমে আরও নিবিড়ভাবে যুক্ত করতে হবে। বননির্ভর জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে অনেক সময়ই জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে। বন্যপ্রাণী ও মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির আওতায় কমিউনিটি টহল দলগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান মো. ইমরান আহমেদ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সারোয়ার আলম। তিনি সহ-ব্যবস্থাপনা দিবসকে আরও বড় পরিসের পালনের জন্য ভবিষ্যতে বন বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। এছাড়াও সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির আঞ্চলিক নেটওয়ার্কগুলোকে একযোগে জাতীয় পর্যায়ে সম্মেলন আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি।

আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে আরণ্যক ফাউন্ডেশনের হেড অব প্রোগ্রামস মাসুদ আলম খান জানান, রফিকুল ইসলামসহ বন সংরক্ষণ করতে গিয়ে সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির কাপ্তাইয়ের হিরু মিয়া, মেধাকচ্ছপিয়ার আলী আহমদ ও আজগর আলী, রেমা-কালেঙ্গার মো. সাদেক জীবন দিয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বনজ সম্পদ রক্ষা করতে এ কমিটির বহু সদস্য আহত হয়েছেন। বন রক্ষায় এসব সদস্যের অবদানের স্মৃতিচারণ করেন মাসুদ আলম খান। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির গুরুত্ব তুলে ধরে এসব কমিটিকে আরও শক্তিশালী করার তাগিদ দেন তিনি।

আরণ্যক ফাউন্ডেশনের সিনিয়র উপদেষ্টা ড. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, সংরক্ষণ যোদ্ধাদের অবদানের কারণেই বন রক্ষায় সহ-ব্যবস্থাপনা আইনি ভিত্তি পেয়েছে। তবে কমিটিগুলোকে টেকসই করতে আর্থিক সক্ষমতা জোরদার করতে হবে। এজন্য সরকারি তহবিল বরাদ্দ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সিএসআর তহবিল এ খাতে ব্যয়ের আহ্বান জানান তিনি। এছাড়াও বন রক্ষায় স্থানীয় টহল দলের (সিপিজি) জন্য স্থায়ী ভাতা কাঠামো প্রতিষ্ঠা ও প্রতি বছর শ্রেষ্ঠ সিপিজি সদস্যকে পুরস্কৃত করারও সুপারিশ করেন তিনি।

আলোচকরা বলেন, রক্ষিত অঞ্চল বিধিমালার (পিএ রুলস ২০১৭) আওতায় পর্যটন থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের অর্ধেক অর্থ সিএমসিগুলোকে প্রদানের সুযোগ রয়েছে। এ ব্যবস্থা কার্যকর করা গেলে সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর জন্য টেকসই আর্থিক সক্ষমতা অর্জন সহজ হবে।

এছাড়াও বন রক্ষায় সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দিবসটি জাতীয়ভাবে পালনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান আলোচকরা।

আলোচনা সভায় সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন প্রতিবেশ প্রকল্পের সিএমও নেটওয়ার্কের কর্মসূচি সমন্বয়কারী এ এইচ এম কামাল।

এতে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন প্রতিবেশ প্রকল্পের বায়োডাইভারসিটি ও ওয়াইল্ডলাইফ বায়োলজি লিড মদিনুল আহসান এবং শ্রীমঙ্গলের ফিল্ড ডিরেক্টর মাজহারুল ইসলাম জাহাংগীর, শাপলাপুর ভিসিএফ’র সভাপতি মো. শাহজাহান, কোডেক কর্মকর্তা শীতল কুমার নাথ, নেকমের শফিকুর রহমান, হিমছড়ি সিএমসি’র সাবেক সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী, খুলনা আঞ্চলিক সিএমসি নেটওয়ার্কের সভাপতি আসাদুজ্জামান মিলন, শ্রীমঙ্গলের আঞ্চলিক সিএমও নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক জনক দেব বর্মন, ইনানী সিএমসির সভাপতি শহীদুল্লাহ কায়সার ও ফাসিয়াখালী সিএমসির কোষাধ্যক্ষ এনামুন্নাহার মুন্নী।

২০০৩-০৪ সাল থেকে বন অধিদপ্তর নিসর্গ কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে রক্ষিত এলাকা সহ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে ২২টি রক্ষিত এলাকায় ২৮টি সহ-ব্যবস্থাপনা সংগঠন সক্রিয় রয়েছে।

ইএআর/ইএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।