অগ্রহায়ণে নবান্ন উৎসবের দেশে

সাজেদুর আবেদীন শান্ত
সাজেদুর আবেদীন শান্ত সাজেদুর আবেদীন শান্ত , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১২:২০ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২৩

আজ নতুন ধান ঘরে তোলার শুভক্ষণ। কারণ আজ পহেলা অগ্রহায়ণ। অনেকে এটিকে ‘আঘন’ মাস বলে থাকেন। গ্রামবাংলায় নানি-দাদিরা এ মাসকে আঘন মাস বা ধান কাটার মাস বলেন। পালিত হয় উৎসব। বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে সেই নবান্ন উৎসব।

অগ্রহায়ণের আভিধানিক অর্থ হলো বছরের যে সময় শ্রেষ্ঠ ব্রীহি বা ধান উৎপন্ন হয়। এ মাসে প্রচুর আমন ধান উৎপন্ন হওয়ায় এ মাসেই নবান্ন উৎসব শুরু হয়। ক্ষেত্র বিশেষ কয়েকদিন আগেপিছে ধান কাটা শুরু হলেও মানুষ অগ্রহায়ণ মাসেই নবান্ন উৎসব পালন করে। নবান্ন অর্থ নতুন অন্ন। আমন ধান কেটে নতুন অন্ন ঘরে তোলাকেই নবান্ন বলা হয়ে থাকে।

এটি বাংলাদেশের ঐত্যিবাহী শস্যোৎসব। অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান কেটে সেই চাল প্রস্তুত করে প্রথম রান্নার উৎসব এটি। অনেকেই অগ্রহায়ণের দ্বিতীয় দিনের মধ্যেই চাল প্রস্তুত করেন। গ্রামে গ্রামে এই চাল দিয়ে রান্না হয় গুড়ের পায়েস অথবা ক্ষির। আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে একে অপরের আতিথেয়তা রক্ষা করে।

আরও পড়ুন: নন্দীগ্রামে ধানের শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন 

সোনাতলার প্রবীণ ব্যক্তি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম স্মৃতি চারণ করে বলেন, ‘ছোটবেলায় অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম শুক্রবার মসজিদে যাওয়া কোনোভাবেই মিস করিনি। কারণ নবান্ন উৎসবে গ্রামের অনেক মানুষই মসজিদে ক্ষির দিতো। নামাজ শেষে মসজিদের উঠানেই কলাপাতায় করে চেটেপুটে খেতাম। তবে এখন তা আর দেখা যায় না। কালের পরিক্রমায় তা আজ হারাতে বসেছে।’

শামীম রেজা বলেন, ‘আগে আমন ধান কাটতে গ্রামের যুবকরা দলবেঁধে মাঠে যেতাম। গান গাইতাম আর ধান কাটতাম। ধান কাটার পরে তা বিক্রি করে শীতের সোয়েটার, জামা কিনতাম। এখন তো গ্রামে এ দৃশ্য দেখাই যায় না।’

এ মাসে মেয়ে-জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়। মেয়েকে বাপের বাড়িতে ‘নাইওর’ আনা হয়। গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজ বয়ে যায়। তখন নানা ধরনের দেশীয় নৃত্য, গান, লাঠিখেলা, বাউল গান, নাগরদোলা, বাঁশি, শখের চুড়ি, খই, মোয়ার পসরা বসে গ্রাম্য মেলায়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেসব অনেকটাই হারাতে বসেছে। তারপরও যতটুকুই পালিত হচ্ছে, বাঙালির সংস্কৃতিকেই জানান দিচ্ছে।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।