বিষধর রাসেলস ভাইপার যেভাবে চিনবেন

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১৮ পিএম, ১১ জুন ২০২৪

বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় রাসেলস ভাইপার ইদানীং কৃষি জমিতেও দেখা যাচ্ছে। এতে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। ঢাকার কাছেই মানিকগঞ্জের কিছু এলাকায় গত ৩ মাসে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে অন্তত ৫ জন মারা গেছেন বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাই কৃষি জমিতে কাজ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে। বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপকে চিনতে হবে।

বাংলাদেশে যে নামে পরিচিত

রাসেলস ভাইপার সাপ বাংলাদেশে ‘চন্দ্রবোড়া’ বা ‘উলুবোড়া’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশে যেসব সাপ দেখা যায়; সেগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বিষাক্ত। এটি ভাইপারিডি পরিবারভুক্ত ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম বিষধর সাপ এবং উপমহাদেশের ভয়ংকর চারটি সাপের একটি।

সাপটি যেভাবে চিনবেন

রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়ার দেহ মোটাসোটা, লেজ ছোট ও সরু। প্রাপ্তবয়স্ক সাপের দেহের দৈর্ঘ সাধারণত ১ মিটার; দেহের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ ১.৮ মিটার পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এর মাথা চ্যাপ্টা, ত্রিভুজাকার এবং ঘাড় থেকে আলাদা। থুতু ভোঁতা, গোলাকার এবং উত্থিত। নাসারন্ধ্র বড়, যার প্রতিটি একটি বড় ও একক অনুনাসিক স্কেলের মাঝখানে অবস্থিত। অনুনাসিক স্কেলের নিচের প্রান্তটি নাসোরোস্ট্রাল স্কেলে স্পর্শ করে। সুপ্রানসাল স্কেল একটি শক্তিশালী অর্ধচন্দ্রাকার আকৃতি ধারণ করে এবং নাসালকে সামনের দিকে নাসোরোস্ট্রাল স্কেল থেকে আলাদা করে। রোস্ট্রাল স্কেল যেমন বিস্তৃত তেমনই এটি উচ্চ।

রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়ার শরীর লেজসহ সর্বোচ্চ ১৬৬ সেন্টিমিটার (৬৫ ইঞ্চি) পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এশিয়ার মূল ভূখণ্ডে গড় প্রায় ১২০ সেন্টিমিটার (৪৭ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়ে থাকে। দ্বীপে আকৃতি সাধারণত কিছুটা ছোট হয়ে থাকে। এটি বেশিরভাগ ভাইপারের চেয়ে সরু।

১৯৩৭ সালে প্রমাণ আকারের প্রাপ্তবয়স্ক চন্দ্রবোড়ার নমুনা তুলে ধরা হয়েছিল:

১. মোট দৈর্ঘ ১.২৪ মিটার (৪ ফুট ১ ইঞ্চি)
২. লেজের দৈর্ঘ ৪৩০ মিলিমিটার (১৭ ইঞ্চি)
৩. ঘের ১৫০ মিলিমিটার (৬ ইঞ্চি)
৪. মাথার প্রস্থ ৫১ মিলিমিটার (২ ইঞ্চি)
৫. মাথার দৈর্ঘ ৫১ মিলিমিটার (২ ইঞ্চি)

আরও পড়ুন

এই সাপের স্বভাব

চন্দ্রবোড়া প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক হয়ে থাকে। অন্য সাপ মানুষকে দংশনের পর সেখান থেকে দ্রুত সরে যায়। রাসেলস ভাইপার ঘটনাস্থল থেকে সরতে চায় না। অন্য সাপ মানুষকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলেও সাপটির স্বভাব তার বিপরীত। তাই প্রতি বছরই অনেক মানুষ কেবল সাপটির কামড়েই প্রাণ হারান। আক্রমণের ক্ষিপ্র গতি ও বিষের তীব্রতার কারণে ‘কিলিংমেশিন’ হিসেবেও পরিচিত সাপটি।

চন্দ্রবোড়ার প্রজনন

রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ ডিম পাড়ার পরিবর্তে সরাসরি বাচ্চা দেয়। ফলে সাপের বাচ্চাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এরা বছরের যে কোনো সময় প্রজনন করে। তবে মে থেকে পরের ৩ মাস প্রজনন সবচেয়ে বেশি হয়। একটি স্ত্রী সাপ গর্ভধারণ শেষে ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা দেয়। তবে কোনো কোনো চন্দ্রবোড়া সাপের ৮০টি পর্যন্ত বাচ্চা দেওয়ার রেকর্ড আছে।

চন্দ্রবোড়ার অবস্থান

রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাধারণত ঘাস, ঝোঁপ, বন, ম্যানগ্রোভ ও ফসলের ক্ষেতে, বিশেষত নিচু জমির ঘাসযুক্ত উন্মুক্ত ও কিছুটা শুষ্ক পরিবেশে বাস করে। স্থলভাগের সাপ হলেও পানিতে দ্রুতগতিতে চলতে পারে। ফলে বর্ষাকালে কচুরিপানার সঙ্গে বহুদূর পর্যন্ত ভেসে নিজের স্থানান্তর ঘটাতে পারে। এরা নিশাচর। এরা খাদ্য হিসেবে ইঁদুর, ছোট পাখি, টিকটিকি ও ব্যাঙ খায়। বসতবাড়ির আশেপাশে চন্দ্রবোড়ার খাবারের প্রাচুর্যতা থাকায় খাবারের খোঁজে অনেক সময় লোকালয়ে চলে আসে।

সাপটি কোথায় পাওয়া যায়

রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়াকে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দুর্লভ সাপ বলা হয়। এটি পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ জেলায়, বিশেষ করে নদীয়া, বর্ধমান, উত্তর চব্বিশ পরগনা ও বাঁকুড়া জেলার গ্রাম অঞ্চলে ভয়ের অন্যতম কারণ। আগে শুধু বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে দেখা যেত। ফলে এটি বরেন্দ্র অঞ্চলের সাপ বলেই পরিচিত ছিল। বর্তমানে পদ্মা অববাহিকা ধরে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলায় বিস্তৃত হচ্ছে। দেশের রাজশাহী, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর, হাতিয়া এবং ভোলায় এ সাপের উপস্থিতি দেখা গেছে।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।