ঠাকুরগাঁওয়ে তৈরি সস্তা আইসক্রিমের বারো অবস্থা
ঠাকুরগাঁওয়ে নিম্নমানের উপাদান ও ক্ষতিকর রং মিশিয়ে আইসক্রিম তৈরির অভিযোগ উঠেছে কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে। আর এসব আইসক্রিম বিক্রি করা হচ্ছে শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে। কম দামে বিক্রি হওয়ায় নিম্নমানের এসব লুফে নিচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা।
এসব আইসক্রিম তৈরিতে এক ধরনের পাউডার দুধ, চিনি, ঘণচিনি, কর্ন ফ্লাওয়ার, সেকারিন, স্টাবিলাইজার, ফ্লেভার, ফুড কালার ও পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। যা মানবদেহে অত্যন্ত ক্ষতিকর।
নিউ কুলফি, লাবন্য কুলফি, মেট্রো কুলফিসহ আরো বিভিন্ন নামে ১৫-২০টি কারখানা নিম্নমানের এসব আইসক্রিম তৈরি করে বাজারজাত করছে। অথচ এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো তদারকি নেই।

শিশু বিশেজ্ঞরা বলছেন, নিম্নমানের সস্তা দামের এসব আইসক্রিম খেয়ে শিশুরা সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ফলে কিডনিসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে শিশুরা।
সরেজমিনে দেখা দেছে, শহরসহ বিভিন্ন গ্রামে রং বেরংঙের প্যাকেটে করে ছোট ছোট বাচ্চাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে ক্ষতি এসব আইসক্রিম।
তিন থেকে দশ টাকা মূল্যের দুধ কুলফি, দই কুলফি, ঝালটক কুলফি, অরেঞ্জ কুলফি, লিচু কুলফিসহ নামে বেনামে এসব আইসক্রিম বাজার দখল করে রেখেছে।
কারখানাগুলো গিয়ে দেখা যায়, আইসক্রিম তৈরির জন্য যে সকল উপকরণ ব্যবহার করা হয় তাও স্বাস্থ্যসম্মত না। ফ্রিজগুলোতে ময়লা পানি ব্যবহার করা হয়। কারখানার চারপাশে মাছি, মশার উপদ্রবতো রয়েছেই।
সূত্র মতে, ভালোমানের চকবার আইসক্রিম তৈরিতে মিমি চকলেট ব্যবহার করতে হয়। এতে একটি চকবারের খরচ পড়বে অন্তত ১০টাকা, আর চকবার কুলফির অন্তত ৩ টাকা। কিন্তু তা না করে ক্ষতিকর ওই উপকরণ ব্যবহার করে কারখানা মালিকরা এই খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনেন। আর নিম্নমানের এই আইসক্রিমগুল তৈরি হয় রাতের আঁধারে। অনেকে সকাল হওয়ার আগেই তা কারখানার বাইরে বের করে দেন। যাতে কোনো ধরনের অভিযান হলেও তারা ধরা না পড়ে।
শহরের হাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা আলমগির হোসেন জানান, আমার ছোট ছেলেটি এবার ক্লাস থ্রিতে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ছে। সে প্রতিদিন টিফিন এর কথা বলে ১০ টাকা নেয় আমার কাছে। কয়েকদিন থেকে সে খুব অসুস্থ। জ্বর, গোলাব্যথা, পেট ব্যথা। পরে ডাক্তার দেখানো হলে জানতে পারি সে প্রতিদিন কুলফি আইক্রিম খেত তাই ফুট পয়জন হয়েছে ও ঠাণ্ডা লেগেছে। খুব চিন্তায় আছি কি করবো এখন।
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা পারভিন জানান, গরমের সময় আইসক্রিম অনেক ভালো লাগে। স্কুল ছুটির পড়ে গেটের সামনে আইসক্রিম দেখলে না খেয়ে ভালো লাগে না। তাই প্রতিদিন একটা হলেও খাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আইসক্রিম খেলে সমস্যা হয় তাও লোভ সামলাতে পারি না।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও নিউ কুলফি আইসক্রিম কারখানার মালিক সাহজাহান ফুড কালার বা নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেন।
তিনি জানান, কেউ কেউ ওইসব উপকরণ বা ফুড কালার ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু তিনি করেন না। এছাড়াও তার কারখানা হাইজিন নিয়ম মেনে চলে।
এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁওয়ের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শাজাহান নেওয়াজ জানান, আইসক্রিম শিশুদের জন্য ক্ষতিকারক। আইসক্রিম খেলে সাধারণত ঠাণ্ডা, গলাব্যথা, এজমা, হাঁপানির মতো বড় বড় অসুখ হতে পারে। এছাড়াও এখন যেসকল কমদামি আইসক্রিম পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো বাচ্চাদের খাওয়ার উপযোগি না। এগুলো খেলে পেটের ব্যথা, ফুট পয়জন হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। বাচ্চাদের আইসক্রিম পরিহার করা অতি জরুরী।
এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও সেনেটারি ইন্সপেক্টর আকতার ফারুক জানান, নিম্নমানের এই সস্তা আইসক্রিম আসলে নীরবঘাতক হিসেবে কাজ করছে। বিশেষ করে কাঁচা পামঅয়েল, ডালডা খুবই ক্ষতিকর। আর ফুড কালার ও কোকো পাউডারসহ রাসায়নিক উপকরণ ব্যবহারের মাত্রা ও নির্দেশনা আছে। কিন্তু এগুলো মানা হয় না। ফলে সবমিলিয়ে এই খাবারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসিডিটি, ফুড পয়জনিং, ডায়রিয়া হতে পারে। আর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হিসেবে আলসার এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মূকেশ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, সস্তা দামের এই আইসক্রিমে ক্ষতিকর দ্রব্যাদি মিশ্রনের অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। খুব শিগগিরই এটি বন্ধে অভিযান চালানো হবে। স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাবারের সঙ্গে কোনো ধরনের আপোস করা হবে না।
এমএএস/এবিএস