ঢাবির প্রশাসনিক ভবনে ওয়ার্ড বিএনপির কার্যক্রম!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে (রেজিস্ট্রার ভবনের ৩৪৪ নম্বর কক্ষ) শাহবাগ থানা বিএনপির ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (২১ জুলাই) ঢাবির তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন তার নিজ ফেসবুক প্রোফাইলে বিএনপির নতুন সদস্য ফরম পূরণ ও নবায়নের কার্যক্রমের ছবি পোস্ট করেন।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘প্রতিদিন ১২টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ফরম বিতরণ করা হবে। ফরম সংগ্রহের জন্য জাতীয়তাবাদী আদর্শের ভাই ও বোনদের ফরম নবায়ন ও নতুন সদস্য ফরম পূরণ করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।’
তার এ পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানকার কিছু ছবিতে ২১ নম্বর ওয়ার্ড, শাহবাগ থানা বিএনপি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সংগ্রহের কথা উল্লেখ রয়েছে।
ফেসবুক পোস্টের ছবি থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রুহুল আমিন ছাড়াও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মনিরুল ইসলাম, ভিসি অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মনিরুজ্জামান, সহকারী হিসাব পরিচালক মোহাম্মদ মোন্তাজ আলী, সহকারী লাইব্রেরিয়ান উত্তম কুমার সরকার, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অ্যাডমিনেস্ট্রিটিভ অফিসার মো. সফিউল্যাহ, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সিনিয়র অ্যাডমিনেস্ট্রিটিভ অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম, সায়েন্স লাইব্ররির কর্মচারী মনিরুজ্জামান মনির, হিসাব পরিচালক দপ্তরের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, দপ্তরি মো. করিম আকন্দ, সহকারী হিসাব পরিচালক মো.. আবুল কাশেম, আইইআরের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী মোহাম্মদ রাশেদ পাটোয়ারিসহ হিসাব পরিচালকের অফিসের প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিস সময়ে সমিতির কার্যালয়ে দলীয় সদস্য ফরম পূরণের প্রচারণা চালান।
এ বিষয়ে রুহুল আমিন বলেন, ‘সারাদেশে বিএনপির ফরম বিতরণ চলছে। সেভাবে ক্যাম্পাস ইউনিটের ওপর এই ফরম বিতরণের বিষয়টি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা অফিসের কাজের ফাঁকে, চা বিরতিতে যেয়ে আমাদের ফরম নবায়ন করে আসছি।’
ক্যাম্পাস ইউনিটের কাছে ফরম বিতরণের দায়িত্ব কে দিয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে রুহুল আমিন বলেন, ‘শাহবাগ থানার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মামুন ফরম বিতরণের দায়িত্ব ক্যাম্পাস ইউনিটের ওপর দিয়েছেন।’
২১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মামুন হোসেন বলেন, ‘আমি এতকিছু (প্রশাসনিক ভবনে ফরম বিতরণের ঘটনা) জানি না। আমি তাদেরকে (ইউনিটের নেতাদের) শুধু ফরম ও ব্যানার দিয়েছি। তবে প্রশাসনিকভাবে যদি এটি নিষিদ্ধ থাকে, তাহলে সেখানে না করা সমীচীন। আর করে থাকলে এটা হয়তো বোঝেনি বা ভুল করেছে। আপনার তাদের সঙ্গে আলাপ করলেই হবে।’

কিন্তু ভিন্ন কথা বলছেন বিএনপির ক্যাম্পাস ইউনিটের প্রেসিডেন্ট ও মুহসীন হলের সিনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এটির আয়োজক ২১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি, আমি না। আমি তখন অফিসে ছিলাম। পরবর্তীতে জানতে পেরে আমি সেখানে যাই। পেশাজীবী সংগঠনের অন্যান্য সহকর্মীরা এটার আয়োজন করেছিলেন।’
অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কক্ষ দলীয় কাজে ব্যবহারের ব্যাপারে জানতে চায়লে তিনি বলেন, ‘অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কক্ষ ব্যবহার করতে হলে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি-সেক্রেটারির থেকে অনুমতি নিতে হয়। সেটা নেওয়া হয়নি। আমি এটিকে উচিত মনে করি না।’
এ বিষয়ে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের স্থায়ী অফিস না থাকায় আমরা সেখানে একদিন দলীয় কার্যক্রম চালিয়েছি। আমাদের এটা উচিত হয়নি। কিন্তু আমরা নিরূপায় হয়ে এটা করেছি।’
রেজিস্ট্রার শামসুদ্দিন আহমেদের কাছে কক্ষ ব্যবহারের অনুমতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না। আপনি বলার পর জানলাম।’ তিনি সন্ধ্যার পর সব জেনে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করলেও সন্ধ্যার পর তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এফএআর/এসআর