গঠনতন্ত্র প্রণয়নে ধীরগতি, ইকসু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ইকসু) গঠনতন্ত্র ও সংবিধি প্রণয়ন কমিটির কার্যক্রমে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। ফলে ছাত্র সংসদ গঠনে অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা দফায় দফায় মানববন্ধন ও প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে ইকসুর রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে গঠনতন্ত্র প্রণয়ন সম্ভব না বলে জানিয়েছে কমিটি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ইকসু গঠনের দাবিতে গত ২৪ আগস্ট ‘মুভমেন্ট ফর ইকসু’র দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র ও সংবিধি প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কার্যক্রমে ধীরগতির ফলে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সাত কার্যদিবসের মধ্যে ইকসুর রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ইবি সংস্কার আন্দোলন ৷ রোডম্যাপ ঘোষণা করা না হলে কঠোর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেন তারা। এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের কার্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠনে স্মারকলিপি জমা দেন তারা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শান্ত শিশির ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বহুদিন ধরে ইকসু গঠনের জন্য আন্দোলন করছি। কিন্তু গঠনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ ধীরগতির হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। আমাদের দাবি, এক সপ্তাহের মধ্যে স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক।’
জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমানের জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্রসহ সব তথ্য সংগ্রহ করেছি। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আমরা প্রথমে অভ্যন্তরীণ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করবো। এরপর ধাপে ধাপে বাইরের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসে ঠিক করবো কোন কোন বিষয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা হবে আর কোনটি বাদ দেওয়া হবে।’
ইবি সংস্কার আন্দোলনের দাবি—এক সপ্তাহের মধ্যে ইকসুর রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের দাবির বিষয়ে আমাদের জানা নেই। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে এটা সম্ভব না। বুধবারের বৈঠকে আমরা কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদের কাঠামো পর্যালোচনা করবো। এই প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগবে। নির্দিষ্ট তারিখ এখনই বলতে পারছি না। কারণ এটি একক কোনো কাজ নয়, সবাই মিলে করতে হবে। তবে নভেম্বরের আগেই প্রস্তাব দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ।’
জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনো জটিলতা হবে কি-না—জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক বলেন, ‘আমার মনে হয় না কোনো জটিলতা হবে। সরকার যদি দায়িত্বশীল থাকে তাহলে কোনো বাধা হওয়ার কথা নয়। আমাদের কাজ শুধু গঠনতন্ত্র তৈরি করা। বাকিটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের ব্যাপার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আইনে ছাত্র সংসদের বিধান নেই। তাই আইন পরিবর্তনের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকারের। আমরা শুধু গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করবো। গঠনতন্ত্রটি সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হতে হবে। কিন্তু আইনে যখন বলা আছে সংসদ থাকবে না, তখন সেটি সংশোধনের দায়িত্ব জাতীয় সংসদের। বর্তমানে জাতীয় সংসদ না থাকায় হয়তো রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করতে হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বরত উপাচার্য (উপ-উপাচার্য) অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইকসু গঠনে যে কমিটি হয়েছে সেটা আমি ফেসবুকে দেখেছি। আমার কাছে কোনো কপি দেওয়া হয়নি। আমি এটার সঙ্গে জড়িত না। এ বিষয়ে উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রার ভালো জানেন।’
প্রসঙ্গত, ইকসু গঠনের দাবিতে গত ২৪ আগস্ট ‘মুভমেন্ট ফর ইকসু’ প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে উপাচার্য নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ নভেম্বরের মধ্যে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আশ্বাস দেন।
ইরফান উল্লাহ/এসআর/এএসএম