লোহাগড়ার ইতনা গণহত্যা দিবস আজ


প্রকাশিত: ০৩:০১ এএম, ২৩ মে ২০১৬

আজ ২৩ মে (সোমবার)। নড়াইলের লোহাগড়ার ইতনা গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক-হানাদার বাহিনী লোহাগড়া উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ইতনা গ্রামে একের পর এক ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। নির্বিচারে হত্যা করে শিশুসহ ৩৯ নিরীহ গ্রামবাসীকে।

এমন বিভৎস ঘটনা ঘটলেও শহীদদের স্মরণে স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও সেখানে সরকারি উদ্যোগে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে ওঠেনি। আর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের দিন কাটছে চরম দুর্দশার মধ্য দিয়ে।

জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে মধুমতি তীরবর্তী পাশাপাশি দুই গ্রাম ইতনা ও চরভাট পাড়া গ্রামে বসেই মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণের নানা পরিকল্পনা করতো। পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান আঁচ করতে পেরে ১৯৭১ সালের ২২ মে দুপুরে চরভাট পাড়া গ্রামে প্রবেশ করে নিরীহ মানুষজনের ওপর হামলা-নির্যাতন শুরু করে।

এ সময় মুক্তিবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং হানাদার বাহিনীর সঙ্গে শুরু হয় যুদ্ধ। প্রায় দু’ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধে ৪ জন পাকসেনা ও ১৪ মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়।

এক পর্যায়ে পাক-সেনার পিছু হটার সময় ইতনা গ্রামের অনিল কাপালি নামে এক ব্যক্তি এক পাকসেনার কাছ থেকে রাইফেল কেড়ে নিয়ে পাশের মধুমতি নদীতে ফেলে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।

এ ঘটনার পর ভাটিয়াপাড়া ক্যাম্পের পাকহানাদার বাহিনী হিংস্র রূপ ধারণ করে। তারা চরভাট পাড়া গ্রামের অনিল কাপালিকে খুঁজতে থাকে। তখন প্রাণের ভয়ে চরভাট পাড়ার মানুষজন জানিয়ে দেয়, অনিল কাপালির বাড়ি মধুমতি নদীর পূর্ব পাড়ের ইতনা গ্রামে। অনিল কাপালিকে ধরার জন্য পাকবাহিনী গানবোট করে ৭১ সালের ২৩ মে ভোরে ফজরের আজানের সময় ইতনা গ্রামে ইতিহাসের এক জঘন্যতম গণহত্যা চালায়।

fight

শিশুসহ ৩৯ জন নারী-পুরুষ গণহত্যার শিকার হয়। ২৩ মে ইতনা গ্রাম প্রেতপুরীতে পরিণত হয়। নিহতদের কবর দেয়ার মত কোনো লোক ইতনা গ্রামে ছিল না। রাতে গোপনে নিহতদের নিকট আত্মীয়-স্বজনরা ৩৯ জনকে গ্রামের বিভিন্ন স্থানে গণকবর দিয়ে প্রাণ ভয়ে অন্যত্র পালিয়ে যান।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা রাজিব মীনা জানান, ২৩ মে ভোরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নির্বিচারে হত্যা করে ইতনা গ্রামের শেখ হাফিজুর রহমান হিরু, সৈয়দ শওকত আলী, সৈয়দ কাওছার আলী, সৈয়দ এসমত আলী, সৈয়দ মোশাররফ আলী, শেখ তবিবর রহমান (তবি), সিকদার ওয়ালিয়ার রহমান, শিকদার হাবিবুর রহমানসহ ৩৯ জন মুক্তিকামী মানুষকে।

এ সময় তারা কয়েকশ বাড়িঘরেও অগ্নি সংযোগ করে। এছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন সময় ওই গ্রামের আরও ১১জন শহীদ হন বলেও জানান তিনি।

দিবসটি পালন উপলক্ষে এলাকাবাসীর আয়োজনে শহীদের নাম ফলকে পুস্পমাল্য অর্পণ, কোরআনখানি, মোনাজাত, মিলাদ মহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
 
হাফিজুল নিলু/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।