নারীদের তৈরি হাতপাখাতেই ঘোরে ৩০০ পরিবারের চাকা

এসকে রাসেল
এসকে রাসেল এসকে রাসেল , জেলা প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ কিশোরগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৫:৩৭ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

ঘরের আঙিনায় কয়েকজন একসঙ্গে বসে তৈরি করছেন হাতপাখা। এরমধ্যে কেউ তালপাতা চিরিয়ে নিচ্ছেন। কেউবা পাখা তৈরি করছেন। তৈরি করা এসব পাখায় বেত দিয়ে চাকা বাঁধছেন কেউ। আবার কেউ তালপাতায় রং দিচ্ছেন। একেকজন একেক কাজে ব্যস্ত।

পড়াশোনা পাশাপাশি গ্রামের মেয়েরাও তাদের মায়েদের সহযোগিতা করছেন। এভাবেই কিশোরগঞ্জে নারীদের তৈরি হাতপাখাতেই ঘুরছে ৩০০ পরিবারের চাকা।

নানা কারুকাজের দৃষ্টিনন্দন এই পাখা হাওর উপজেলা নিকলীর অর্ধশত বছরের ঐতিহ্য। এরমধ্যে সূত্রধর পাড়া, টেকপাড়া ও মালপাড়া তো ‘তালপাখা গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত।

বর্তমানে গ্রামগঞ্জ ও শহরে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে এ হাতপাখার কদর বাড়ছে। এমনকি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের উপহার হিসেবে তালিকায়ও ঠাঁই পাচ্ছে হাতপাখা।

জানা গেছে, প্রায় ৫৪ বছর আগে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা নিকলীর টেকপাড়া গ্রামের শুভা রানী সূত্রধর প্রথমে শুরু করেন হাতপাখা তৈরির কাজ। তিনি তার বাবার বাড়ি থেকে শিখে আসা সেই পাখা তৈরির কাজ শেখান অন্য নারীদেরও। এরপর আস্তে আস্তে টেকপাড়া, মালপাড়া ও সূত্রধরপাড়া গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীর বেশির ভাগ নারীই জড়িয়ে পড়েন এ কাজে। বর্তমানে মুসলিম পরিবারের অনেক নারীরাও তৈরি করছেন এসব হাতপাখা।

ঘরের আঙিনায় কয়েকজন একসঙ্গে বসে তৈরি করছেন হাতপাখা। এরমধ্যে কেউ তালপাতা চিরিয়ে নিচ্ছেন

কারুকাজ ও নির্মাণ শৈলী ভেদে একেকটি পাখা ১০০-১২০ টাকা করে পাইকারি বিক্রি হয়। তালপাতা, প্লাস্টিক সূতা, বাঁশ ও বেতজাত কাঁচামালে তৈরি হয় পাখাগুলো। প্রতিটি পাখা তৈরিতে ৬০-৮০ টাকা খরচ হয়।

শুভা রাণী নামে এক কারিগর জানান, পাড়ার বিভিন্ন বয়সের নারীদের অধিকাংশই হাতপাখা তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করছেন। তবে কেউ কেউ সারাবছর অন্য কাজ করলেও চৈত্র ও বৈশাখ মাস এলেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন হাতপাখা তৈরির কাজে। ভরা মৌসুমে পাড়াগুলোতে এখন উৎসবের আমেজে চলছে হাতপাখা তৈরির কাজ।

শিক্ষার্থী সালমা আক্তার বলেন, পড়াশোনার ফাঁকে পাখা তৈরির কাজে মাকে সহযোগিতা করি। পাখা তৈরির অর্থ দিয়ে আমাদের সংসারের খরচের পাশাপাশি পড়াশোনার খরচও চলে।

টেকপাড়া গ্রামের অলকা রায় ও দিপা রায় বলেন, তালপাতার পাখা তৈরিতে সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা আরও স্বাবলম্বী হতে পারতাম। অনুদান বা স্বল্প সুদে ঋণ দিতে সরকারের কাছে দাবি জানাই।

এ বিষেয়ে নিকলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাপিয়া আক্তার বলেন, সমাজসেবার মাধ্যমে কম সুদে ঋণ দেওয়া হয় ও যুব উন্নয়নের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত কুটিরশিল্প মেলায় তাদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনের জন্য স্টলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

এসকে রাসেল/জেডএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।