অটোরিকশা চোরচক্রে জড়িত ‘শ্রমিক নেতারা’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০৬:০৪ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের উত্তর কালাপুর গ্রামের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক সেলিম মিয়া। লোন নিয়ে কিনেছিলেন অটোরিকশা। মাসখানেক আগে সেই গাড়ি চুরি করে নেয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। নিজের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে এখন সেলিম মিয়া দিশেহারা। শুধু সেলিম নয়, তার মতো মৌলভীবাজারের আরও অনেক অটোরিকশাচালক এখন আতঙ্কে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় এরকম হরহামেশাই ঘটছে অটোরিকশা চুরির ঘটনা। দিনে দুপুরে কিংবা রাতে এই চক্র প্রতিনিয়তই চুরি করছে। অনেকে অটোরিকশা হারিয়া যেমন নিঃস্ব আবার অনেক চালক চক্রকে অর্থ দিয়েও ফেরত পাচ্ছেন অটোরিকশা।

চালক সেলিম মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাড়িতে ভাই ও আমার গাড়িটা ছিল। দুটা গাড়িই লোন নিয়ে কিনেছিলাম। রাত আড়াইটা পর্যন্ত সজাগ, এরমধ্যেই গাড়িগুলো চুরি করে নিয়ে গেছে। এখন আমি ভাড়ায় গাড়ি চালাই। আমার লোনও পরিশোধ করতে হয়েছে। কত জায়গায় গেছি কেউ উদ্ধার করে দিতে পারেনি।

আরেক অটোরিকশাচালক জসিম বলেন, গাড়ি চুরির পর আমি অনেক বেকায়দায় পড়ে গেছি। এখন ভাড়া করে গাড়ি চালাচ্ছি। আগে নিজের গাড়ি ছিল। চুরির পর অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়লাম।

চালক শফিক বলেন, আমরা জানি, এই চুরির পেছনের গডফাদার হলো লেংরা। তার সঙ্গে আমাদের কিছু শ্রমিক নেতাও জড়িত।

অটোরিকশা চোরচক্রে জড়িত ‘শ্রমিক নেতারা’

অপর চালক সালাউদ্দিন বলেন, শুনেছি মৌলভীবাজারের বড় একটা সিন্ডিকেট চুরির গাড়ি কালেকশন করে। আমার গাড়ি চুরি হয়েছিল। দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে শ্রমিক নেতা সুলতানের মধ্যমে গাড়িটা ফেরত পাই।

ভুক্তোভোগীরা অভিযোগ করেন, মৌলভীবাজার জেলার পার্শ্ববর্তী সিলেট ও হবিগঞ্জকে কেন্দ্র করে এক দশক ধরে গড়ে উঠেছে চোরচক্র। এতে জড়িত চক্রের সর্দার আবু তালেব ওরফে লেংড়া তালেব, মৌলভীবাজারের শ্রমিক নেতা সুলতানসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র। সম্প্রতি আবু তালেব পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও বাকিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।

পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন জানায়, গত দুই বছরে মৌলভীবাজারে অটোরিকশা চুরির ঘটনা ঘটেছে শতাধিক। অনেক ক্ষেত্রে চালকে হত্যা করেও চুরির ঘটনা ঘটে।

মৌলভীবাজার জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল হক সেলিম জাগো নিউজকে বলেন, যেসব চোরচক্র ও নামধারী শ্রমিক নেতারা জড়িত তাদের তালিকা পুলিশ প্রশাসনের কাছে আছে। আবার তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে গ্রেফতারও হচ্ছে। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে আবারও সংঘবদ্ধ হচ্ছে। তালিকাভুক্ত এসব আসামিদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হোক।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এম, কে, এইচ, জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আন্তঃজেলা অটোরিকশা চোর চক্রের তালিকা রয়েছে পুলিশের হাতে। তালিকাভুক্ত আসামিদের আইনের আওতায় আনতে আভিযানিক কার্যক্রম অব্যাহত। এসব অটোরিকশা ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও শনাক্তের কাজ চলছে।

ওমর ফারুক নাঈম/জেডএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।