ফসল হারানোর শঙ্কায় সুনামগঞ্জের ১০ লাখ কৃষক

লিপসন আহমেদ লিপসন আহমেদ , সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৭:১৮ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০২৫

বোর ধানের ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত সুনামগঞ্জ। এ জেলার ১২ উপজেলার ১৩৭টি হাওরে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই ধান পহেলা বৈশাখের আগে থেকে কাটতে শুরু করেন কৃষকরা। কিন্তু হঠাৎ আবহাওয়া অফিসের বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢল নামার পূর্বাভাসে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে ভাটির জেলায়। আর এতে হাওর এলাকার আনন্দ যেন মুহূর্তেই থমকে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৩ হাজার ৭৪৭ দশমিক ১৮ বর্গ কিলোমিটারের জেলা সুনামগঞ্জ। এই জেলার অর্থনীতির চাকা সচল থাকে হাওরের ধান উৎপাদনকে কেন্দ্র করে। পাশাপাশি জেলার উৎপাদিত বোরো ধান দিয়ে সারাদেশের চারদিনের খাদ্যের খোরাক যোগায়।

ফসল হারানোর শঙ্কায় সুনামগঞ্জের ১০ লাখ কৃষক

এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে জেলার ১০ লাখ কৃষক ধারদেনা কিংবা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে দুই লাখ ২৩ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে বোর ধানের চাষ করেন। সেই ধানের বাম্পার ফলন হয়।

ফলে বৈশাখ শুরুর আগ মুহূর্ত থেকে হাওরের ধান পেকে যাওয়ায় আনন্দ দেখা দেয় কৃষকদের। এরমধ্যে ১০ এপ্রিল কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী হাওরে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান কাটার উদ্বোধন করেন।

হাওর জুড়ে ধানের বাম্পার ফলনে যখন কৃষকরা আনন্দে আত্মহারা, ঠিক তখনই যেন কালো মেঘের ছায়া দেখা দিয়েছে এ অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে।

বিশেষ করে বৈশাখ শুরুর প্রথম দিন থেকে এই জেলায় শুরু হয়েছে কাল বৈশাখী ঝড়। সেই সঙ্গে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী টানা এক সপ্তাহ ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এতে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে হাওর এলাকায়।

করচার হাওরের কৃষক জালাল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, অনেক কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করেছি। এরই মধ্যে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এখন ফসল ঘরে তুলতে না পারলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাবো।

করচার হাওরের আরেক কৃষক সুলতান মিয়া বলেন, চড়া সুদে টাকা এনে বোরো ধানের চাষাবাদ করেছি। ধান এখনো পুরোদমে পাকেনি, তার মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, দুশ্চিন্তায় আছি।

ফসল হারানোর শঙ্কায় সুনামগঞ্জের ১০ লাখ কৃষক

দেখার হাওরের কৃষক স্বপন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, সুনামগঞ্জে বৃষ্টিতে ফসল হানির শঙ্কা কম, তবে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত শুরু হলে আমাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস পাওয়ার পর, ফসলহানির ঝুঁকি এড়াতে ১৩৭টি হাওরের পাকা ধান দ্রুত কাটার পরামর্শ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে হাওরের শত ভাগ ধান ঘরে না তোলা পর্যন্ত জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি অধিদপ্তরের সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, সুনামগঞ্জ ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি পাতের কারণে জেলার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি হতে পারে।

লিপসন আহমেদ/জেডএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।