২০ বছরে অর্ধেকে নেমেছে সেন্টমার্টিনের নারিকেল গাছ

জাহাঙ্গীর আলম জাহাঙ্গীর আলম , উপজেলা প্রতিনিধি টেকনাফ (কক্সবাজার)
প্রকাশিত: ১১:৫৪ এএম, ০১ মে ২০২৫

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন পরিচিত নারিকেল জিনজিরা নামেও। প্রচুর পরিমাণে নারিকেল গাছের জন্য এ নামে পরিচিত দ্বীপটি। বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার নারিকেল গাছ রয়েছে এ দ্বীপে। ২০ বছর আগে দ্বীপে ২৫ হাজারের মতো নারিকেল গাছ ছিল বলে জানা গেছে। যথাযথ পরিচর্যার অভাব, সাদা মাছির (হোয়াইট ফ্লাই) আক্রমণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে দিনদিন কমছে গাছের সংখ্যা। এতে স্বকীয়তা হারাচ্ছে দ্বীপটি। নারিকেল গাছ রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি স্থানীয় ও পর্যটকদের।

স্থানীয়রা বলছেন, ২০ বছর আগে ২৫ হাজার বা তার চাইতেও বেশি নারিকেল গাছ ছিল সেন্টমার্টিনে। বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অনিয়ন্ত্রিতভাবে গড়ে তোলা কটেজ, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও দালানের কারণে গাছ কমছে। এছাড়া স্থানীয়রা অধিকাংশ জায়গা বিক্রি করাসহ নারিকেল গাছের সঠিক পরিচর্যা না করানোয় গাছের সংখ্যা কমে গেছে ও ডাব ধরছে না।

২০ বছরে অর্ধেকে নেমেছে সেন্টমার্টিনের নারিকেল গাছ

তারা আরও জানান, বর্তমানে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ৪৩ হেক্টর জমিতে প্রায় ১২ হাজার নারিকেল গাছ রয়েছে। নারিকেল গাছে সাদা মাছির আক্রমণে তুলনামূলক হারে ফলন কমে গেছে ও ফলের আকৃতি ছোট হয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালে পুরো দ্বীপজুড়ে একসঙ্গে স্প্রে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল টেকনাফ উপজেলা কৃষি অফিস। পরবর্তীতে কীটনাশকের প্রভাবে জনজীবন ও প্রাণিকুলের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। তবে বর্ষাকালে এই পোকার উপদ্রব অনেকাংশে কমে যায়।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছৈয়দ আলম বলেন, সেন্টমার্টিনের অপর নাম হলো নারিকেল জিনজিরা। একসময় নারিকেল গাছে ভরপুর ছিল এ দ্বীপ। গাছ ও গাছের পাতায় পোকা ধরার কারণে এখন গাছের সংখ্যা অনেকাংশে কমে গেছে। গাছ থেকে এসব পোকা নিধন করতে যে স্প্রে বা মেডিসিন লাগে তা ক্রয় করার সামর্থ্য অনেকের নেই। এতে নারিকেল গাছের সঠিক পরিচর্যার অভাবে গাছের ক্ষতি হচ্ছে।

২০ বছরে অর্ধেকে নেমেছে সেন্টমার্টিনের নারিকেল গাছ

তিনি আরও বলেন, আমার বাড়িতে দাদার লাগানো ১৩০টি নারিকেল গাছ ছিল, এখন তা কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। অধিকাংশ নারিকেল গাছ ভেঙে গেছে, পোকার কারণে তা নষ্ট হয়ে গেছে। নারিকেল জিনজিরায় বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার নারিকেল গাছ আছে, এগুলো রক্ষার্থে সঠিক পরিচর্যা করার জন্য কৃষি বিভাগসহ সবার এগিয়ে আসা দরকার।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, পর্যটন মৌসুমে বিভিন্ন বাড়ির নারিকেল গাছের মালিক থেকে ডাব কিনে পর্যটকদের বিক্রি করে টাকা আয় করতাম। এখন পর্যটকও নেই ডাব বিক্রিও বন্ধ। কয়েক বছর ধরে নারিকেল গাছ থেকে নারিকেল ও ডাব কম পাওয়া যাচ্ছে।

২০ বছরে অর্ধেকে নেমেছে সেন্টমার্টিনের নারিকেল গাছ

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন পোকামাকড় বিশেষ করে সাদা মাছির আক্রমণে নারিকেল গাছ আক্রান্ত হচ্ছে। সেজন্য নারিকেলের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। পর্যটন মৌসুমে দ্বীপের অধিকাংশ মানুষ নারিকেল ও ডাব ব্যবসা করেন। রোগাক্রান্ত নারিকেল গাছ ভেঙে পড়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের অধিকাংশ নারিকেল গাছে পোকা বা সাদা মাছি আক্রমণ করছে। এ তথ্য জানার পর এসব বিষয়ে কৃষি অফিসকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এমএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।