সৈয়দপুর পৌরসভা

যানবাহনে চড়ে আতঙ্কে থাকি, কখন যেন উল্টে যায়

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী
প্রকাশিত: ০৭:৪০ পিএম, ২৪ জুলাই ২০২৫

সড়কের পিচ ও পাথর উঠে গেছে। কোথাও কোথাও সড়কে যে খোয়া-বালু ছিল তাও নেই। কখনো কখনো সড়কেই উল্টে যায় যান। ফলে ক্ষতবিক্ষত সড়কটি এখন মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এটি নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কের চিত্র। রেলের সড়কটি জিআরপি মোড় থেকে গার্ডপাড়া মোড় পর্যন্ত প্রায় ৭০০ মিটার চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গত দেড় যুগ ধরে এই সড়কে কোনো সংস্কার হয়নি। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে পৌরসভা সংস্কার করবে। অপরদিকে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, সড়কের ওই অংশটি রেলের তাই সংস্কার করবে রেল কর্তৃপক্ষ। এই দুই দপ্তরের টানাটানির কারণে ওই পথে চলাচলকারী ব্যক্তিদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

যানবাহনে চড়ে আতঙ্কে থাকি, কখন যেন উল্টে যায়

অথচ শহরের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। এ সড়কের পাশে রয়েছে উপজেলার প্রধান ডাকঘর, রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপারের দপ্তর, দেশের বৃহত্তর রেলওয়ে কারখানা, রেলওয়ে হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া জেলা শহরের সংযোগ সড়কও এটি।

সড়কের পাশের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সম্প্রতি রেল উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রেলওয়ে কারখানা পরিদর্শনে এসেছিলেন। এসময় সড়কটির খানাখন্দ ভরাট করতে মাটি দিয়ে সংস্কার করা হয়েছিল। এতে যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়েছে। বর্ষায় মানুষের পায়ে হেটে চলাচলে আরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সাইকেল ও মোটরসাইকেলের চাকা পিছলে হরহামেশা ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া ভাঙাচোরা সড়কের কারণে প্রভাব পড়ছে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে।

ইজিবাইকের চালক জামাল উদ্দিন বলেন, সড়কে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন কয়েকবার। কিন্তু এ সড়কে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাই বাধ্য হয়ে যাত্রী তুলেন। কিন্তু কখন দুর্ঘটনা ঘটে, এ নিয়ে আতঙ্কে থাকেন। রাস্তাটি দ্রুত মেরামত প্রয়োজন।

রিকশাচালক রফিক হাসান বলেন, সড়কের পাকা বলতে কিছু নেই। ভাঙা জায়গায় পড়ে রিকশার ক্ষতি হয়। এতে বাড়তি টাকা খরচ হয়। এ কারণে যাত্রী বেশি ভাড়া দিলেও যেতে মন চায় না। অনেক সড়ক মেরামত হয়, কিন্তু এই সড়কের কাজ কখনো হয় না।

সৈয়দপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহমুদা আক্তার বলেন, খানাখন্দে ভরা সড়কটি দিয়ে স্কুলে যেতে ভোগান্তি হয়। বৃষ্টি হলে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। কোনো যানবাহন যেতে চায় না। যানবাহনে চড়লেও আতঙ্ক থাকি, কখন যেন উল্টে যায়।

যানবাহনে চড়ে আতঙ্কে থাকি, কখন যেন উল্টে যায়

সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের বলেন, সড়কটির বেহালদশা দেখে দেড় বছর আগে পৌরসভা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল। প্রায় ৬৩ লাখ টাকার দরপত্র পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। ওই সময় রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক সড়কটি রেলের দাবি করে পৌরসভার সংস্কার করার এখতিয়ার রাখে না বলে চিঠি দেন। পরে বাধ্য হয়ে পুনরায় পত্রিকায় দরপত্র বাতিলের বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। এ বিষয়ে রেল আন্তরিক হলে এতদিনে সড়কটি সংস্কার হয়ে যেত।

সৈয়দপুর পৌরসভা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, পৌরসভার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কারের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি সড়কের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। খুব শিগগির কাজ শুরু হবে। কিন্তু পৌরসভার মধ্যে হলেও সড়কের ওই অংশটি যেহেতু রেলের, তাই পৌর কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা থাকলেও করতে পারছে না। অথচ পৌরবাসী ভুল বুঝে পৌর কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আবার আলোচনা করে এ বিষেয়ে নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ জাগো নিউজকে জানান, তিনি নিজেই ভুক্তভোগী। ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চারবার যাতায়াত করেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর রেলের প্রধান প্রকৌশলীকে তিনি এ বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। সড়কটি পৌরসভাকে দিয়ে সংস্কার কাজ করার রেলের পরিকল্পনা থাকলেও এ সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে গেছে। বর্তমানে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হবে।

আমিরুল হক/জেডএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।