রাজশাহীতে ওএমএস চালের জন্য রাতভর লাইনে সাধারণ মানুষ
রাজশাহীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন দামে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষ। চাল, ডাল, তেলসহ প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ভুগছেন নিম্নআয়ের মানুষ। দৈনন্দিন খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এই পরিস্থিতিতে সরকার নির্ধারিত সাশ্রয়ীমূল্যের ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) চালই এখন অনেকের জন্য একমাত্র ভরসা। তবে সেই চাল কিনতে প্রতিদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহীর চৌদ্দপাই ফায়ার সার্ভিস মোড় সংলগ্ন এলাকায় প্রতিদিনই ওএমএস চালের বিতরণ হয়। সোমবার দিবাগত রাতে দেড়টার দিকে দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা যায়- নারী, বৃদ্ধ, অসুস্থ মানুষ এবং ছোট শিশু হাতে নিয়েও অপেক্ষা করছেন অনেকে। রাত যত গভীর হয় লাইনের দীর্ঘতা তত বাড়ে। ভোর হতে না হতেই শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েক কেজি চালের আশায় নারী-পুরুষ-শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন।
নিম্নআয়ের মানুষের অভিযোগ, প্রতিদিন শতশত মানুষ লাইনে দাঁড়ালেও বরাদ্দ সীমিত থাকায় অনেকে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। শুধু চাল নয়, বাজারে ডাল, তেলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও সাধারণ মানুষের ক্রয়ের বাইরে চলে গেছে। ফলে দারিদ্র্য পরিবারগুলো প্রতিদিন নতুন করে সংগ্রামের মুখোমুখি হচ্ছেন।
মহোনপুরের মোসলেমা বেগম বলেন, সারা রাত লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। সকাল হলেও চাল পাইনি। যদি খালি হাতে ফিরতে হয়, তবে সন্তানদের মুখে কী দেব?
রিকশাচালক শহিদুল ইসলাম জানান, দিনে যা আয় করি, তা দিয়ে বাজার থেকে চাল কিনতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে ওএমএস চালের লাইনে আসি। কিন্তু অনেক দিনই চাল মেলে না।
আরও পড়ুন:
৩ জেলায় টানা ৫ দিন বাস চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের ভোগান্তি
রাজশাহীতে পুকুরে পড়ে প্রাণ গেলো দুই শিশুর
মরজিনা বেগম বলেন, এত রাতে কষ্ট করে আসি। টাকা দিয়েও জিনিস কিনতে পারি না। দুপুরে ফিরে যেতে হয় খালি হাতে, এটা খুবই কষ্টের।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দেখা গেছে, চাল বিতরণ শেষ পর্যায়ে। রাত থেকে লাইনে দাঁড়ানো অনেকেই তখনও চাল পাননি। কার্যক্রম শেষে দেখা যায়, অনেকেই খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। এমনকি গতকাল সোমবার রাতের লাইনধরা অনেকেই চাল পায়নি।
এদিকে কার্যক্রমের শেষে দেখা যায় ওএমএস পণ্য নেওয়ার তালিকায় একই ব্যক্তির নাম একাধিকবার লেখা।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলার উপ-খাদ্যনিয়ন্ত্রক রিপর আলী বলেন, প্রতিবন্ধী দুই ব্যক্তি পণ্য নিতে এসেছিলেন, যাদের নাম নেওয়া হয়নি তাই। এজন্য অন্য নাম বসিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সঠিকভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছি। প্রতিদিনই ৩০টি ওয়ার্ডে আমরা এক টন করে চাল ও আটা বিতরণ করছি। নিয়ম মেনেই বিতরণ করছি। আনেকেই পাচ্ছেন না কারন সকালে লাইনে দীর্ঘ মানুষ থাকে। এটি আমার প্রশাসনকে জানিয়েছি, তারা পরিমাণ বাড়ালে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
সাখাওয়াত হোসেন/এনএইচআর/এএসএম