ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ময়লার স্তূপ, দুর্গন্ধে নাকাল পথচারীরা
দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। প্রায় ৩০ কিলোমিটার অংশে একাধিক স্থানে এই দৃশ্য দেখা যায়। রাতের আঁধারে পৌরসভার কর্মীরা বর্জ্য এনে সড়কের পাশে ফেলছেন। দিনের বেলায় সেই বর্জ্য পচে তৈরি হচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ। ফলে পথচারী ও যাত্রীরা নাক চেপে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। সড়কের বিশাল অংশ ময়লা-আবর্জনায় দখল হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়েছে বহুগুণে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌরসভাগুলোর অব্যবস্থাপনার কারণেই এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এই বর্জ্য থেকে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কাও করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাই পৌরসভার সব ময়লা আগে পাহাড়ের পাদদেশে নিয়ে যাওয়া হত। কিন্তু গত এক বছর ধরে পৌরসদরে মারুফ প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে মহাসড়ক ঘেঁষে রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় এসব বর্জ্যে আগুন দেওয়া হয়, এতে মহাসড়ক ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। ধোঁয়ার কারণে চালকেরা দেখতে না পাওয়ায় বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়াও, মিরসরাই থেকে সীতাকুন্ড পর্যন্ত আরও কয়েকটি স্থানে সড়কের পাশে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, বাদামতলী, বড়তাকিয়া, সোনাপাহাড়, সীতাকুণ্ডের পস্থিছিলা, বড়দারোগাহাটসহ বারইয়ারহাট পৌরসভার দক্ষিণ পাশে ৪টি স্পট।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বারইয়ারহাটে বাজারে উত্তরা বাসস্ট্যান্ডের পাশে মহাসড়ক দখল করে ময়লা আবর্জনা রাখা হয়েছে। এসব আবর্জনার মধ্যে পশুর নাড়িভুঁড়ি, মুরগির পরিত্যক্ত বর্জ্যসহ দুর্গন্ধযুক্ত নানা বস্তা, হাসপাতাল বর্জ্য ও পচা ময়লা রয়েছে। ময়লাগুলো পচে সড়কে পানি গড়াচ্ছে। পাশ দিয়ে লোকজন নাক চেপে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। এরপর বারইয়ারহাট দক্ষিণ ইউটার্নেও সড়ক সড়কের ওপর সব ময়লা আবর্জনা রাখা হয়েছে। ইউটার্নে বিভিন্ন দিকের যানবাহন ঘুরাতে গিয়ে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সমস্যা হচ্ছে।
স্থানীয় চা দোকানি নুরুল করিম বলেন, এখন পৌরসভার মা-বাপ নাই মনে হয়। পৌরসভার সব ময়লা আবর্জনা সড়কের ওপর রেখে যায়। আমি গন্ধের কারণে দোকান করতে পারছিনা। দু একদিন পর দোকান বন্ধ করে চলে যাবো।
পথচারী এমদাদ হোসেন বলেন, সড়কের বিশাল অংশ দখল করে ময়লা রাখা হয়েছে। হাঁটা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। মনে হয় অভিবাবকহীন হয়ে পড়েছে বারইয়ারহাট পৌরসভা।
এদিকে বারইয়ারহাটে মহাসড়কে রাখা ময়লার পাশে হাসপাতাল, থানা ও একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি রয়েছে। মিরসরাই পৌরসভা এলাকায় একটি সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও একটি বিদ্যালয় রয়েছে।
ট্রাক চালক শাহাদাত হোসেন বলেন, বারইয়ারহাটে মহাসড়কের প্রায় ১২ ফিট জায়গায় ময়লা আবর্জনা রাখা হয়েছে। পথচারী তো হাঁটা দূরের কথা, গাড়ির যাওয়াও কঠিন হয়ে গেছে এই সড়ক দিয়ে।
মিরসরাই মারুফ মডেল প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক মাহমুদ বলেন, স্কুল থেকে যাওয়া আসার সময় নাক চেপে ধরতে হয়। গন্ধে স্কুলে বসতেও কষ্ট হয়। আমরা চাই এখানে ময়লাগুলো না ফেলে অন্যত্র ফেলুক।

স্থানীয়রা জানান, সাদা বক, শালিক, কাক ছাড়াও কুকুরের উপস্থিতিও কম নয় এই ভাগাড়ে। মহাসড়কের বড় দারোগারহাট এমন একটি ভাগাড় রয়েছে। ওই এলাকার ওভারলোড গাড়ির স্কেল এলাকায় রয়েছে সুবিশাল এক ময়লার ভাগাড়। শুধু তাই নয় মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষও খাবারের সন্ধানে সেখানে অবস্থান নেয়। কাকসহ বিভিন্ন পশুপাখির সঙ্গে এসব ময়লার ভাগাড়ের জীবাণু চলে যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে। এসব জীবাণু থেকে সৃষ্টি হচ্ছে নানা রোগব্যাধি।
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, সড়কের ওপর কিংবা সড়কের পাশে এসব ময়লা থেকে যে দূগন্ধ ছড়াচ্ছে তা মানুষের শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি করতে পারে। দ্রুত এগুলো অপসারণ করা জরুরি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের চট্টগ্রাম সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ্উদ্দীন চৌধুরী বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে নির্দেশনামূলক সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। কিন্তু কার কথা কে শোনে। এ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বারইয়ারহাট পৌর প্রশাসক সোমাইয়া আক্তার বলেন, বর্জ্যগুলো অন্যত্র অপসারণের জন্য বলা হয়েছে। পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বেতনও বাড়ানো হয়েছে। তারপরও তারা কেন সড়কে বর্জ্য ফেলছে সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
এম মাঈন উদ্দিন/কেএইচকে/জিকেএস