মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী হয়ে প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০৯:৪৩ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২৫
সদ্য সমাপ্ত প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার মডেল টেস্টে অংশ নিয়েছে ওই শিক্ষার্থী/ছবি-সংগৃহীত

নেত্রকোনার বারহাট্টায় এক মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

ওই শিক্ষার্থী (১২) বারহাট্টা উপজেলার সাহতা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সে গতবছর উপজেলার ময়মনসিংহ ডহরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস কর। পরে ওই বিদ্যালয় থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে সাহতা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বর্তমানে সে নিয়মিত ক্লাস করছে এবং ডিসেম্বরে ষষ্ঠ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেবে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তাকে এখনো ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে দেখানো হচ্ছে এবং বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ানো হচ্ছে। ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার মডেল টেস্টে সে অংশ নেয় কদমদেউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। মঙ্গলবার পরীক্ষা শেষ হয়।

ওই সেন্টারের পরীক্ষার হাজিরা খাতায় তার নাম ও সই রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত হল সুপার ও একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মামুন মিয়া।

ওই শিক্ষার্থী এক বছর ধরে ময়মনসিংহ ডহরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উপবৃত্তিও গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।

ওই শিক্ষার্থীর বাবা উপজেলার সাহতা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা। ছেলেকে সাহতা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করার পর তিনি ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হন।

এ ঘটনায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এবং ডহরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষক।

শিক্ষকরা বলছেন, একজন মাধ্যমিক শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানো শুধু অনৈতিক নয়, এটি পরীক্ষার নিয়ম ও শিক্ষা প্রশাসনের প্রতি অমান্যতার শামিল।

এ বিষয়ে জানতে ওই শিক্ষার্থীর বাবার মোবাইল নম্বরে কল দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সাহতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ মজিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‌‌‘ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে আমাদের বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির নিয়মিত ছাত্র। তার রোল নম্বর**। সে গতবছর ডহরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে।’

এ বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ ডহরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামাল মিয়ার ব্যবহৃত মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

কুমারপাড়া হিলোচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও হল সুপার মো. মামুন মিয়া বলেন, ‘ওই ছাত্র বৃত্তি পরীক্ষার মডেল টেস্টে অংশ নিয়েছে, এটা সত্য। সে অন্য একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। আমাদের একজন শিক্ষক এসব ডকুমেন্টস বের করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জমা দিয়েছেন। আমিও বিষয়টা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীকে এনে আবার প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ানো অনিয়ম। বিষয়টা শুনেছি। তবে এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। ঘটনা তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিষয়টি অবহিত করলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আজম বলেন, ঘটনা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এইচ এম কামাল/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।