প্রথম হয়েও নিয়োগ বঞ্চিত, ডিসি-অধ্যক্ষসহ ৭ জনের নামে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৮:৪৯ এএম, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

বগুড়ায় একটি মাদরাসার নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করার পরও এক বেকার যুবকের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠেছে। ঘুষের অর্থ না দেওয়ায় তাকে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী যুবক তৎকালীন জেলা প্রশাসকসহ মোট সাতজনকে বিবাদী করে আদালতে মামলা করেছেন।

তবে আদালত কৈফিয়ত তলব করলেও বিবাদীরা জবাব না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) জানা গেছে, বগুড়া শহরের মাটিডালী এলাকার নামুজা এসএসআই ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসায় ‘গবেষণাগার/ল্যাব সহকারী’ পদে চাকরির জন্য আবেদন করেন শাহাদত হোসাইন।

মামলার বিবরণে বলা হয়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় শাহাদত হোসাইন ৩৪.৫০ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। নিয়োগ কমিটি স্বাক্ষরিত ফলাফলের বিবরণীও তাকে সরবরাহ করা হয়।

বাদী শাহাদত হোসাইনের অভিযোগ, গত ১৫ সেপ্টেম্বর মাদরাসার অধ্যক্ষ রুস্তম আলী মোবাইল ফোনে তাকে মাটিডালী মোড়ের একটি হোটেলে ডেকে নেন। সেখানে ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সদস্যের উপস্থিতিতে নিয়োগপত্র দেওয়ার আগে তার কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত ৬ অক্টোবর স্থানীয় একটি পত্রিকায় ওই পদে আবারও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

একই দিন বিকেলে শাহাদত হোসাইন তৎকালীন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজার সঙ্গে দেখা করে ঘুষ দাবির বিষয়টি জানালে জেলা প্রশাসক দুর্ব্যবহার করে তাকে কক্ষ থেকে বের করে দেন বলে তার অভিযোগ। পরে লিখিতভাবে ঘুষ দাবির বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেন তিনি। নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ায় শাহাদত হোসাইন গত ৯ অক্টোবর বগুড়ার প্রথম জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতে মামলা (মামলা নং: ৭৩৯/২০২৫) দায়ের করেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন জানান, আদালত বিবাদীদের সাত দিনের মধ্যে কৈফিয়ত তলব করেছিলেন। কিন্তু বিবাদীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো জবাব না দেওয়ায় আদালত নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশ দেন। আগামী ২০ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদরাসার অধ্যক্ষ রুস্তম আলী ঘুষ দাবির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘ঘুষ দাবির বিষয়টি সঠিক নয়। এমনকি ওই চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে আমার দেখাও হয়নি। আগামী শুনানির তারিখে আদালতে জবাব দাখিল করব।’

এই মামলায় বগুড়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা, নামুজা এসএসআই ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ মোট সাতজনকে বিবাদী করা হয়েছে।

বগুড়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা গত ১৬ নভেম্বর বদলিজনিত কারণে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন। এর আগে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি আদালতে জবাব দেওয়ার কথা জানান।

বগুড়া জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দ জানান, নামুজা মাদরাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। চাকরিপ্রার্থীর কাছে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগটি আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা জজ আদালতের গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) শফিকুল ইসলাম টুকু বলেন, মামলাটি ডিসির ব্যক্তিগত নামে হয়নি। পদের (সরকারি পদ) ওপর এ ধরনের অসংখ্য মামলা হয়ে থাকে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।