বাগেরহাট

বিএনপির প্রার্থী সাবেক দুই আ’লীগ নেতা, ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বাগেরহাট
প্রকাশিত: ০৮:৫৬ এএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

বাগেরহাটে চারটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আলোচনার চেয়ে সমালোচনাই বেশি বইছে। নেতাকর্মীদের অভিযোগ- মনোনয়নপ্রাপ্ত চার জনের মধ্যে দুইজনই আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা। মাত্র এক বছর আগে দলবদল করে আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে আসা এই নেতারা দলকে ডোবাবেন বলেই ধারণা স্থানীয় নেতাকর্মীদের। সামাজিক মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তাদের ছবি শেয়ার করে নানা আলোচনা-সমালোচনা করেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

বাগেরহাট-১ (ফকিরহাট-মোল্লহাট-চিতলমারী) আসনে মনোননয় পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ণ মন্ডল। তিনি একইসঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব ও বাংলাদেশ অশ্বিনী সেবা আশ্রমের সভাপতিও। ছিলেন চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।

অপরদিকে বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের সভাপতি সোমনাথ দে। তিনি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি ছিলেন। এছাড়া মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন। এর আগে সোমনাথ দে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সংখ্যালঘু বিষয়ক উপদেষ্টা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ছিলেন।

দেশবিরোধী চক্রান্তের অভিযোগে কপিল কৃষ্ণ মন্ডল চলতি বছরের মার্চে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। অপর একটি মামলায় কারাভোগ করেছেন সোমনাথ দে। জেল থেকে বেরিয়ে সনাতন ধর্মের অনুসারীদের নিয়ে ২০ আগস্ট বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে দলটিতে যোগ দেন কপিল ও সোমনাথ।

শনিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয় থেকে প্রার্থী ঘোষণার পর আসন দুটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

মো. আসাদ নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অভিভাবক যদি চিহ্নিত ফ্যাসিস্টদের দিয়ে রাষ্ট্র বিনির্মাণের কাজ করতে চান, তাহলে এমন সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়াটাও অন্যায়। ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে বিপ্লবী ওসমান হাদিকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের চিহ্নিত কিলার দ্বারা প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাদেরকে নমিনেশন দিয়ে সমস্ত ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

মো. শিমুল নামে একজন লিখেছেন, ‘এই সেই আওয়ামী লীগের দালাল। যাকে ১ আসন থেকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। এটা মানুষ মেনে নেবে না। বিএনপির জনগণ এটা মেনে নেবে না। সারা বছর রাজপথে থেকে, সতেরো বছর ঘুমাতে পারিনি। এখন উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। কত টাকার বিনিময়ে নমিনেশন পেয়েছে এটা আমাদের জানতে হবে।’

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের করার কিছু নেই। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দীর্ঘদিন দল করে, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করার পর অন্যদলের কেউ এসে মনোনয়ন পাওয়ায় তারা ক্ষোভে ফুঁসছে। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে এসব বিষয় কেন্দ্রকে জানিয়েছি।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম বলেন, আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এটি কীভাবে মেনে নিবে বলেন? তারা দুজনই সুবিধাবাদী। শেখ হেলালের ঘনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। সনাতন ধর্মের যদি কাউকে দিতেও হয়, ভালো যে হিন্দু ভাইয়েরা রয়েছে তাদের থেকে দিতো। নেতাকর্মীরা সত্যিই হতাশ হয়ে পড়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন রাজপথে ছিলেন জানিয়ে বাগেরহাট-২ আসনের মনোনয়নও পুনর্বিবেচনার দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাট-১ আসনের মনোনয়নপ্রাপ্ত কপিল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ‘আমি কখনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। এটিই আমার প্রথম রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া। দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ মন্দিরের সভাপতি হওয়ায় নির্যাতিত হিন্দুদের অধিকার আদায়ে আমি সবসময় সোচ্চার ছিলাম। এ কারণে এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে আমার কথা বলতে হয়েছে। সেইসব ছবি দেখিয়ে এখন ষড়যন্ত্র চলছে। কেউ বলতে পারবে না, কোনো রাজনৈতিক মঞ্চে আমি বক্তব্য দিয়েছি।’

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটির কাগজ ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘চাইলে অনেক বড় পদ আমি পেতাম, ইউনিয়ন কমিটিতে কেন যাবো। আর মামলার বিষয়টিও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। উচ্চ আদালত থেকে গত সপ্তাহে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।’

বাগেরহাট-৪ আসনে মনোনয়নপ্রাপ্ত সোমনাথ দে বলেন, ‘আমি মনোনয়ন পাওয়ায় যারা চাঁদাবাজ, জুলুমকারী তাদের গাত্রদাহ হচ্ছে। কিন্তু যারা সাধারণ মানুষ তারা আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। আমি জাতীয় পার্টি করেছি, আওয়ামী লীগ করেছি, ৫ আগস্টের পর জেল খেটেছি। আমার নামে এখনো তিনটি মামলা রয়েছে। এসব জেনেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়, দলের হাইকমান্ড আমাকে মনোনীত করেছেন। আমি নির্বাচিত হলে মোরেলগঞ্জ-শরণখোলায় কেউ এক কাপ চাও অবৈধভাবে খেতে পারবে না।’

নাহিদ ফরাজী/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।