শীতে কাঁপছে সিরাজগঞ্জ
যমুনা পাড়ের সিরাজগঞ্জে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। কয়েক দিন ধরে হিমেল হাওয়া ও উচ্চ আর্দ্রতার কারণে শীতের উপস্থিতি স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে। এতে দিনমজুর, কৃষিশ্রমিক, রিকশাচালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ কাজে যেতে পারছেন না।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় জেলার তাড়াশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার নলিছাপাড়া গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন (৭৩)। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে শহরের বিভিন্ন স্থানে লাউ শাক বিক্রি করেন। এ থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে চলে তার সংসার। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকেও কনকনে ঠান্ডা থাকায় শহরের বাহিরগোলা বাজারে শাক বিক্রি শেষ না করে বাড়ি ফিরে যান তিনি।
রিকশাচালক মঞ্জিল সেখ বলেন, জ্বরের জন্যে ঠিকভাবে রিকশা চালাতে পারছি না। কিস্তি ট্যাহায় রিকশা কিনছি, ঘরে থাকলে কিস্তি দিমু ক্যামনে। এজন্য বের হয়েছি।
শহরের আরেক রিকশাচালক জুলহাস বলেন, একদিন কাম না করলে ঘরে চাল ডাল থাকে না। এদিকে ঠান্ডায় শরীর কাঁপে। কনকনে জার আর কুয়াশার জইন্যে যাত্রীও বাইর হয় কম।
সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের শাহ আলম বলেন, মাঠে কাজ থাকলেও ঠান্ডার কারণে কাজে যাচ্ছি না। ঠান্ডা থেকে বাঁচতে পরিবারের সবাই মিলে খড়কুটোর আগুন জ্বালিয়ে দিন কাটাচ্ছি।
একই গ্রামের কৃষক আব্দুল মমিন বলেন, ঠান্ডা আর কুয়াশার কারণে মাঠে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। নিজে কাজে নামলেও বেশিক্ষণ মাঠে থাকা যাচ্ছে না। হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় কম্বল জড়িয়েও রেহাই মিলছে না।
রায়গঞ্জ উপজেলার দিনমজুর কোরপ আলী জানান, আমরা গরীব মানুষ। ঠান্ডা আর প্যাটের ভোগ একসঙ্গে সহ্য করা মুশকিল। ঠান্ডার সময় আমাদের কষ্ট বেশি হয়। আমাদের জন্য গরমের দিন ভালো।
সিরাজগঞ্জ শহরের সিএনজিচালক রাশিদুল ইসলাম বলেন, ঠান্ডার কারণে যাত্রী কমে গেছে। আগে প্রতিদিন গড়ে ৭০০-১০০০ টাকা আয় হতো। এখন ৩০০-৪০০ টাকা হয়। ঠান্ডায় মানুষ বের হচ্ছে কম। স্কুলশিক্ষক রুবেল শেখ বলেন, পর্যাপ্ত গরম কাপড় পড়লেও ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়ছি। তবে আমাদের চাইতে যমুনার চরাঞ্চলের মানুষ আরও বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন।
তাড়াশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে হিমেল বাতাস থাকায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন থাকতে পারে।
এমএ মালেক/আরএইচ/জেআইএম