বাণিজ্যমেলার প্রস্তুতি শেষের দিকে, অপেক্ষা উদ্বোধনের
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) নতুন বছরের ১ জানুয়ারি বসতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ৩০তম আসর। স্টল সাজানোর জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আয়োজকরা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যেগে পূর্বাচলে পঞ্চমবারের মতো মতো বসবে এ মেলা। ১ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মেলার উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
মেলা উদ্ধোধনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতির কাজে চলছে তোড়জোড়। নির্দিষ্ট সময়ে মেলা উদ্ধোধনকে সামনে রেখে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে স্টলের নির্মাণের কাজ। নির্মাণ শ্রমিকদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। যথাসময়েই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মেলা প্রাঙ্গণে হাতুড়ি-পেরেকের টুংটাং শব্দ, শেষ সময়ের ডেকোরেশন, আর রঙের আঁচড়ে পাহাড়ি সৌন্দর্যে সেজে উঠছে স্টলগুলো। স্টল সাজানোর জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আয়োজকেরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পূর্বাচলের (বিবিসিএফইসি) প্রাঙ্গণে দিন-রাত পরিশ্রম করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন শ্রমিকরা। বেশিরভাগ স্টলগুলোর অকাঠামো নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে রং, আলোকসজ্জা ও নান্দনিক সাজসজ্জার কাজ চলছে।
কোনো কোনো স্টলে পণ্য সাজানোর কাজও চলছে পুরোদমে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই স্টল ও প্যাভিলিয়নের কাজ পুরোপুরিভাবে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, এবারের মেলায় দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ৩২৪টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন দেওয়া হয়েছে। অংশ নেবে ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, ইরান, সিঙ্গাপুর ও আফগানিস্তানসহ একাধিক দেশের প্রতিষ্ঠান।
মেলার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে ‘বাংলাদেশ স্কয়ার’, যেখানে দর্শনার্থীরা দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও উন্নয়ন অগ্রযাত্রার নানা দিক বিষয়ে জানতে পারবেন।
প্রীতি কালেকশন স্টলে কাজ করছিলেন রংমিস্ত্রি জুয়েল। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করছি। রং, সাজসজ্জাসহ সব কাজ ৩১ ডিসেম্বরের ভেতরেই সম্পন্ন হবে।’
লিজা এন্টারপ্রাইজ নামে ইমিটেশন জুয়েলারির স্টলের স্টাফ মোহাম্মদ আবীর হোসেন বলেন, ‘১০-১২ জন নির্মাণশ্রমিক দিন-রাত কাজ করছেন। আমাদের স্টলের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কাঠের ডিজাইন ও রঙের কাজ শেষের দিকে। আশা করছি আগামী দুদিনের মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন হবে।’

কনট্রাক্টর মোতালিব হোসেন জানান, মেলায় দুই হাজার ৫০০ স্কয়ার ফুটের একটি প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ নিয়েছেন। শেডের কাজ শেষ করে এখন রঙের কাজ করছেন। বাকি কাজ ৩১ ডিসেম্বরের আগেই শেষ হয়ে যাবে।
আইপি কালেকশনের মালিক রহমতউল্লাহ জানান, প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ডেকোরেশনের কাজও প্রায় শেষ। এখন রঙের কাজ চলছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ হবে।
ইপিবি মেলা ও প্রদর্শনী বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) ওয়ারেস হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই প্যাভিলিয়ন ও স্টলের কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। মেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসিটিভি নজরদারি রাখা হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত প্রবেশপথ এবং সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা টিম থাকছে পুরো মেলাজুড়ে। পাশাপাশি নকল ও নিম্নমানের পণ্য বিক্রি ঠেকাতে কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) আব্দুর রহিম খান বলেন, এবারের মেলায় পলিথিন ব্যাগ এবং সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিকল্প হিসেবে হ্রাসকৃত মূল্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব শপিং ব্যাগ সরবরাহ করা হবে। এছাড়া, তারুণ্যের শক্তি ও উদ্ভাবনী উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে মাসব্যাপী মেলায় থাকছে সেমিনার/সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন আয়োজন।
নাজমুল হুদা/এসআর/এমএস