বন্ধ হতে বসেছে চিত্রশিল্পী সুলতানের শিশুস্বর্গ


প্রকাশিত: ১১:০৭ এএম, ২৯ জুন ২০১৬

চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের হাতে গড়া ছবি আঁকার প্রতিষ্ঠান শিশুস্বর্গে ছবি আঁকার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিশুস্বর্গ এখন মৃত প্রায়। গত কয়েক বছরে শিশুস্বর্গের তিনজন সংগঠক ও শিক্ষক মৃত্যুবরণ করায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
 
বর্তমানে বৈতনিক হিসেবে একজন শিক্ষক ছবি আঁকা শেখালেও দুই মাসের ছুটিতে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত গেছেন। এছাড়া আর্ট কলেজের দুজন ছাত্র বিনা বেতনে শ্রম দিচ্ছেন।
    
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান শিশুদের খুব ভালো বাসতেন। সেজন্য ১৯৭৮ সালের দিকে নিজ উদ্যোগে শহরের কুড়িগ্রামে ‘শিশুস্বর্গ’ নামে ছবি আঁকার শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনি বলতেন, শিশুরা প্রকৃতির ছবি আঁকলে তারা কখনও মন্দ হতে পারে না। এজন্য প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে ছবি আঁকার জন্য তিনি বড় বজরাও (ইঞ্জিনচালিত নৌকা) তৈরি করেন।
 
১৯৯৪ সালে শিল্পী সুলতানের মৃত্যুর পর তার পালিত ছেলে চিত্রশিল্পী দুলাল সাহা, ভাবশিষ্য চিত্রশিল্পী কাজল মুখার্জি ও চিত্রশিল্পী লিটন বিশ্বাস শিশুস্বর্গের হাল ধরেন। তারা তিনজন শিশু স্বর্গের দুই শতাধিক শিশুর প্রতি শুক্রবার নিয়মিত ক্লাস নিতেন। কিন্ত ২০০১ সালের ১৩ ফ্রেব্রুয়ারি শিশুস্বর্গের অন্যতম সংগঠক কাজল মুখার্জির মৃত্যু হয়।
 
বর্তমানে শহরের কুড়িগ্রামে নির্মিত সুলতান কমপ্লেক্সের শিশুস্বর্গ ভবনে শিশুদের ছবি আঁকার ক্লাস হয়। এখানে বিনা বেতনে শিশুরা ছবি আঁকার সুযোগ পায়। ২০১৪ সালের ৬ মে শিল্পীর পালিত ছেলে ও শিশুস্বর্গের শিক্ষক দুলাল সাহা হার্ট অ্যাটাকে এবং এ বছরের ১২ জুন সুলতান কমপ্লেক্সের সহকারী কিউরেটর ও শিশুস্বর্গের শিক্ষক চিত্রশিল্পী লিটন কুমার বিশ্বাস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে শিশুস্বর্গের অবস্থা আরও বেহাল হয়ে পড়ে।

এদিকে শিশুদের ছবি আঁকার জন্য দুই শতাধিক হার্ডবোর্ড ব্যবহার না করে ফেলে রাখায় তা ঘুনে ধরেছে।

গত দুই বছর পূর্বে দেড় থেকে দুই শতাধিক শিশু ক্লাস করলেও বর্তমানে সেখানে ক্লাস করছে ৫০ থেকে ৬০ জন। ২০১৩ সাল থেকে চিত্রশিল্পী বলদেব অধিকারী শিশুস্বর্গে ক্লাস নিলেও তিনি অসুস্থ। গত মাসে তিনি দুই মাসের ছুটি নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত গেছেন।
 
এছাড়া অবৈতনিকভাবে আর্ট কলেজের ছাত্র প্রয়াত চিত্রশিল্পী দুলাল সাহার বোনের ছেলে নয়ন সাহাসহ দুজন প্রতি শুক্রবার নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন।

নড়াইল জেলা চারুশিল্পী পরিষদের সদস্য সচিব চিত্রশিল্পী সমির কুমার বৈরাগী শিশুস্বর্গের পূর্বের অবস্থা ফিরিয়ে আনতে গেলে কমপক্ষে চারজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া উচিত বলে মনে করেন।

জেলা কালচারাল অফিসার ও এসএম সুলতান কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর মো. হায়দার আলী জানান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সুলতান কমপ্লেক্সের সহকারী কিউরেটর ও শিশুস্বর্গের শিক্ষক হিসেবে তিনজনকে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

উল্লেখ্য, ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট বরেণ্য এই চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান শহরের মাছিমদিয়ায় এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।