যশোর-৪

বিএনপি প্রার্থীকে ‘ঋণখেলাপি’ উল্লেখ করে ব্যাংকের চিঠি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ০৯:২৫ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

ঋণখেলাপি ও সিআইবি রিপোর্টে তালিকাভুক্ত উল্লেখ করে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে যশোর-৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর, বসুন্দিয়া) আসনে বিএনপি প্রার্থী তালহা শাহরিয়ার আইয়ুবের (টিএস আইয়ূব) প্রার্থিতা গ্রহণ না করতে চিঠি দিয়েছে ব্যাংক।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) যশোরের রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আশেক হাসানকে এই চিঠি দিয়েছে ঢাকা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকটির ঢাকা ধানমন্ডি মডেল ব্রাঞ্চের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রিয়াদ হাসান ও সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার এস এম রাইসুল ইসলাম নাহিদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে টিএস আইয়ূবকে ‘ঋণখেলাপি ও সিআইবি রিপোর্টে তালিকাভুক্ত’ উল্লেখ করা হয়েছে।

টিএস আইয়ুব সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে আসনটির বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনি। আসনটিতে টিএস আইয়ুব ছাড়াও বিএনপির পরিচয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেরুল হক সাবু ও অভয়নগর বিএনপির সভাপতি মতিয়ার রহমান ফারাজী। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন টিএস আইয়ুবের ছেলে ফারহান সাজিদ।

যশোরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ঢাকা ব্যাংকের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তালহা শাহরিয়ার আইয়ুব আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৪ থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। প্রকৃতপক্ষে, তালহা শাহরিয়ার আইয়ুব সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। প্রতিষ্ঠানটির নামে ঢাকা ব্যাংকের ধানমন্ডি মডেল শাখা থেকে তিনি ঋণ গ্রহণ করেন। ২০১৮ সাল থেকে তিনি একজন ঋণখেলাপি। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার অনুযায়ী একজন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো রিপোর্টে তিনি একজন মন্দজনিত ঋণখেলাপি।’

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, টিএস আইয়ুব তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ঢাকা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেন এবং বৈদেশিক রপ্তানি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত দলিলাদি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন। যে টাকা অনাদায়ী ও অপ্রত্যাবশিত হিসাবেই আছে। যার প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের এবং চার্জশিট প্রদান করেন। এছাড়া ঢাকা ব্যাংক ঋণের টাকা আদায়ের জন্য তার বিরুদ্ধে অর্থঋণ মামলা দায়ের করলে আদালত ব্যাংকের পক্ষে রায় ও ডিক্রি প্রদান করেন। পরবর্তীতে ব্যাংক অর্থজারি মোকদ্দমা দায়ের করে, বর্তমানে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর্যায়ে আছে। উক্ত মামলা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে চেক ডিজ-অনার সংক্রান্ত সি. আর মামলা রয়েছে। যা বর্তমানে শুনানি পর্যায়ে রয়েছে।

উপরোক্ত অবস্থার প্রেক্ষিতে, ঋণখেলাপি ও সিআইবি রিপোর্টে তালিকাভুক্ত তালহা শাহরিয়ার আইয়ুবের নির্বাচনি এলাকা থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রার্থিতা গ্রহণ না করাসহ যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে ব্যাংকটি।

এই বিষয়ে আসনটির বিএনপি মনোনীত প্রার্থী টিএস আইয়ুব বলেন, ‘ঋণ খেলাপি ছিলাম, আদালতের মাধ্যমে এখন ঋণখেলাপি নই। তারপরও যদি ব্যাংক কোনো চিঠি দিয়ে থাকে, তাহলে বিস্তারিত ব্যাংক বলতে পারবে।’

তবে এ ব্যাপারে টিএস আইয়ুবের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বিএনপির শীর্ষ এক নেতা টিএস আইয়ুবের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকের এই চিঠি ওই নেতার ষড়যন্ত্রেরই অংশ।

এ বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আশেক হাসান বলেন, ‘টিএস আইয়ুবের বিরুদ্ধে ঢাকা ব্যাংক থেকে চিঠি এসেছে। মনোনয়ন যাচাই বাছাইকালে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

মিলন রহমান/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।