নরসিংদীতে চলছে আধিপত্যের লড়াই


প্রকাশিত: ০৭:৫৬ এএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

নরসিংদী জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৯৯৩ ভোটারই আছেন এখন ফুরফুরা আমেজে। রাজনৈতিক ভাবে এর আগে এত কদর কখনোই পাননি তারা। কারণ এবার রাজনৈতিক ভাবে আধিপত্য ও মনস্তাত্বিক যুদ্ধে নেমেছেন আওয়ামী লীগের দুই নেতা।

এর মধ্যে একজন সাবেক মন্ত্রী ও অপরজন বর্তমান প্রতিমন্ত্রী। এতে প্রায় প্রতিদিনই ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে কড়া নাড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের কোনো না কোনো বড় নেতা। তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছেন আওয়মী লীগের ত্যাগী ও হাইব্রিড নেতা-কর্মীরাও।

দলীয় নেতাদের এমন আকস্মিক মূল্যায়ণে ভোটাররাও মহা খুশি। তারা বলছেন ভোট যুদ্ধ হবে এবার সেয়ানে সেয়ানে। ভোটযুদ্ধে অবতীর্ন দু’জনই হচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ ও প্রবীণ রাজনীতিক নেতা।

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি (জেলা পরিষদ প্রশাসক) অ্যাড. আসাদোজ্জামান। তিনি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার অনুমতিপত্র নিয়ে লড়ছেন আনারস মার্কা প্রতীকে। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভূঞা। তিনি কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে জেলা উপজেলার শীর্ষ নেতাদের সমর্থন নিয়ে প্রবল আশায় বুক বেধে ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।
 
নরসিংদী-৫ ( রায়পুরা) আসনের সাংসদ ও সাবেক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সমর্থন পাওয়া প্রার্থী সাবেক জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাড. আসাদোজ্জামানকে নিয়ে মাঠে নেমেছেন।

আর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভুইয়াকে নিয়ে মাঠে আছেন নরসিংদী-১ (সদর) আসনের সাংসদ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম। এছাড়া জেলা নেতাদের মনোনীত প্রার্থী বলেও জানিয়েছেন একাধিক ভোটার।

এবারের নরসিংদী জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে মূল আলোচনার বিষয় হচ্ছে সাবেক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার ও অস্তিত্বের যুদ্ধ। ভোট প্রয়োগে এই হিসাবটি মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দলীয় নেতা-কর্মীরাও একই হিসাব কষে কোনো না কোনো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।

১৮৮৪ সালে নরসিংদী জেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। ৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ, ছয়টি পৌরসভা ও ছয়টি উপজেলা পরিষদ নিয়ে নরসিংদীর জেলা পরিষদ গঠিত। জেলা পরিষদ নির্বাচনে এখানে মোট ভোটার ৯৯৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৭৬৩ জন আর নারী ভোটার ২৩০ জন।

আগামী ২৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৩২ বছর পর প্রথমবারের মতো নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধি পেতে যাচ্ছে জেলা পরিষদ। ভোট হবে ১৫টি কেন্দ্রে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২ জন, ১৫টি সদস্য পদের বিপরীতে ৫৪ জন ও ৫টি সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী অ্যাড. আসাদোজ্জামান বলেন, আমি দলীয় সমর্থন পাওয়া প্রার্থী। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার পছন্দের একজন হিসেবে আমি সমর্থন পেয়েছি। কিন্তু নেত্রীর চাওয়া আমলে নেননি প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম। নিজের স্বার্থে তিনি আমার বিরুদ্ধে দলের সাধারণ সম্পাদককে প্রার্থী করেছেন।

এখন ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলের নামে কৌশলে এলাকায় এসে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া আমার সমর্থকদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, গুলি ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এর সুষ্ঠু বিচার চাই এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।

তবে এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে জয় পেতে প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেও চান নির্বাচন হোক। যেহেতু তিনি নির্বাচন চেয়েছেন সেই কারণেই মতিন ভূঞা প্রার্থী থেকে গেছেন। তা না হলে একই দলের দুই প্রার্থী হবার কোনো সুযোগ নেই। আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন।

এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভূঞা নিজেকে বিদ্রোহী প্রার্থী ভাবতে নারাজ।

তিনি বলেন, আসাদোজ্জামান দলীয় সমর্থন পেলেও পরে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এরপর দলের সবার জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত হয়ে যায়।

প্রতিপক্ষ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মতিন ভূঞা বলেন, আসাদোজ্জামান প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বিশেষ একটি উপজেলাবাসী উপকৃত হয়েছে। বরাদ্দের ৯০ ভাগ ব্যয় করেছেন তিনি রায়পুরা উপজেলায়। কারণ ওই উপজেলার সাংসদ হলেন রাজিউদ্দিন আহমেদ।

সাবেক মন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ বলেন, আসাদোজ্জামান দল ও প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী। আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও প্রকৃত নেতা-কর্মীরা দলীয় সভানেত্রীর মনোনীত প্রার্থীতে বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছে। সেই কারণে আমি দলের প্রার্থীর সঙ্গে আছি। সেই হিসেবে মতিন ভূঞা দলটির বিদ্রোহী। বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সঞ্জিত সাহা/এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।