নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মেরুকরণ


প্রকাশিত: ০২:২৮ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬

নরসিংদীতে জেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে। ভেসে উঠেছে বিভক্ত জেলা আওয়ামী লীগের পুড়ো চিত্র। উজ্জীবিত হয়েছে ত্যাগী ও কোণঠাসা হয়ে থাকা আওয়মী লীগের নেতাকর্মীরা।  

প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বকে ঘিরে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। এর মূল কারণ জেলা আওয়মী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়া চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী আব্দুল মতিন ভূইয়ার ভরাডুবি।

জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হীরুসহ ২ জন সাংসদের অকুণ্ঠ সমর্থনের পর এ পরাজয়কে ঘিরে প্রশ্ন বিদ্ধ হয়ে উঠেছে জেলার নেতৃত্ব। জেলার সিংহভাগ জনপ্রতিনিধিই আওয়ামী ঘরাণার হওয়ার পরও এই দায়ভার কার সেই প্রশ্ন এখন ঘুরপার খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে।
 
জেলা আ.লীগের চরম বিরোধীতার মধ্যেও নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ও স্থানীয় দুই সাংসদের সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আসাদোজ্জামান।

তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ছিলেন। স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি সাবেক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রায়পুরা আসনের এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু অনুসারী। তার সঙ্গে শিবপুর আসনের এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জোড়ালো সমর্থনে বিজয়ী হন তিনি।

আর এ বিজয়কে ঘিরে জেলার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন যাবৎ কোণঠাসা থাকা এক সময়ের ত্যাগী নেতাকর্মীসহ সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু অনুসারীরা নুতন করে উজ্জীবিত হয়েছে। এখন থেকে দলীয় সভা সমাবেশে আর মাঠে সরব থাকার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছেন।

নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচ বছর আগে নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ড ও মামলাকে ঘিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে জেলা আওয়ামী লীগ। এরই সুবাধে এক সময় জেলার নেতৃত্ব দেয়া রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মন্ত্রীত্ব দুটোই হারিয়েছেন।

অপরদিকে সদরের সাংসদ নজরুল ইসলাম হীরু প্রথমে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও পরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। একই সঙ্গে ৬টি উপজেলার মধ্যে রায়পুরা ব্যতিত সব কয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগে স্থান পেয়েছে প্রতিমন্ত্রীর সমর্থিত নেতাকর্মীরা।
কিন্তু জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান সাবেক মন্ত্রী রাজুর অনুসারী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান।

কিন্তু দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রার্থীকে মেনে নেননি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হীরু। প্রার্থী করান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূইয়াকে।

সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু ছাড়াও আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে সরব ছিলেন, শিবপুরের সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আইয়ুব খাঁন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম কাইয়ূম ও নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোন্তাজ উদ্দিন ভুইঞা।

অপরদিকে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হীরুর পাশাপাশি আবদুল মতিন ভুইঞার পক্ষে ছিলেন, মনোহরদী-বেলাবরের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ন, পলাশের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খাঁন দিলীপ ও নরসিংদীর পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল।

সেই হিসেবে নরসিংদী সদর, পলাশ, মনোহরদী, বেলাব ও শিবপুর ছিল আবদুল মতিন ভুইঞার ভোট ব্যাংক। অপরদিকে শুধুমাত্র রায়পুরা ছিল অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানের ভোট ব্যাংক। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, নরসিংদী সদর উপজেলার ব্রাহ্মন্দী কে কে এম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, ভগিরথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পলাশ উপজেলার আদর্শ শিশু শিক্ষা নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মনোহরদী উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন থেকে আবদুল মতিন ভুইঞা বিজয়ী হয়েছে। চালাকচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই প্রার্থীই সমান ভোট পেয়েছে। বাকী ১০টি কেন্দ্রে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বিজয়ী হয়েছেন। ফলে চূড়ান্তভাবে ৫৩৮ ভোট পেয়ে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বিজয়ী হয়েছেন। আর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবদুল মতিন ভুইঞা পেয়েছে ৪৪৭ ভোট।

কেন্দ্র ভিক্তিক এই ফলাফলে হতাশ বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল মতিন ভুইঞা। কারণ পলাশ ও মনোহরদী ব্যতিত সদর, শিবপুর ও বেলাব উপজেলা থেকে কাঙ্খিত ভোট পাননি তিনি। এ কারণে তিনি আস্থাভাজনদের বিশ্বাস ভঙ্গকে দায়ী করেছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভুইঞা সাংবাদিকদের বলেন, কাছের লোকদের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য আমি পরাজিত হয়েছি। তারা টাকার কাছে নিজেকে বিক্রি করেছে। তাদের বিষয়ে আমি প্রতিমন্ত্রীকে বলবো। আগামীতে তাদের উপর আস্থা রাখলে আমাদের আরও বড় খেসারত দিতে হবে। তিনি বিরোধী শিবিরের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, দলে তাদের কোনো টিকেট (পদ) নাই। টিকেট আমাদের হাতেই। মাঠে আমরাই থাকবো।

এইদিকে দীর্ঘদিন পর জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ের ফলে উজ্জীবিত সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর অনুসারীরা। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল ঢাকায় গেছেন।

তবে নিজের বিজয়কে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে বিজয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থনে আস্থা রেখে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে।

এ বিজয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিজয়। এই বিজয় বার্তা দিয়েছে, আগামী দিনে নরসিংদীতে বঞ্চিতদের নিয়ে আওয়ামী লীগকে পুর্ণগঠিত করতে হবে। বিগত ৫ বছর জেলা পরিষদে প্রশাসক হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। আগামীতে আমি সকলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই।

এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।