আজও শোকে স্তব্ধ আলোকবালী


প্রকাশিত: ০৩:৫৬ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

তিন সহোদর খুনের ঘটনায় আজও শোকে স্তব্ধ নরসিংদীর চরাঞ্চল আলোকবালী। কান্না থামছেনা স্বজনদের। শোক বিরাজ করছে গোটা গ্রাম জুড়ে। ভয় আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে নদী ঘেঁষা শান্ত এই  গ্রামটিতে।

এদিকে, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি স্থানীয় থানা পুলিশ, সিআইডি, পিবিআই পুলিশসহ একাধিক সংস্থা। তবে এরই মধ্যে পুলিশের নিকট হত্যার দায় স্বীকার করেছেন গ্রেফতারকৃত রুবেল।

নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন অভিযুক্ত রুবেলের মা কুলসুম বেগম। বিচারের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসীও।

বৃহস্প্রতিবার দুপুরে সদর থানা পুলিশ অভিযুক্ত রুবেলকে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করেন। খুনের প্রকৃত রহস্য ও কারণ উদঘাটনে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আগামী শনিবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত।  

পারিবারিক কলহের জের ধরে গত মঙ্গলবার রাতে নরসিংদীর মেঘনা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চল আলোকবালীতে আপন বড় ভাইয়ের হাতে তিন সহদোর ভাই-বোন খুন হয়েছে। ধারালো আস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয় আতিকুর রহমান নামে আরেক ভাই। ওই ঘটনায় ঘাতক ভাই রুবেলকে আটক করে পুলিশে শোপর্দ করেছে গ্রামবাসী।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বাবা আবু কামাল বাদী হয়ে অভিযুক্ত ছেলে রুবেলের বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রাম জুড়ে একই আলোচনা। বাজার, নৌকা ঘাট থেকে শুরু করে গ্রামের অলি গলি। শিশু থেকে বুড়ো। সবাই এক বাক্যে বলতে শুরু করেন এটা কিভাবে সম্ভব। বড় ভাই নিষ্পাপ ছোট ছোট ভাই-বোনদের কিভাবে হত্যা করল। শুধু আলোকবালীই নয়, আশপাশ গ্রামেও চলছে নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের গুঞ্জন।

নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় স্বজন ও গ্রামবাসী রুবেলের মা কলসুম বেগমকে শান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। একসঙ্গে তিন সন্তান হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন। বিলাপ আর স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে গেছে পুরো এলাকা।

সাংবাদিক দেখতেই নিহতের মা কলসুম বেগম বলেন, ‘তাকে (রুবেলকে) আপনেরা গুল্লি কইরা মাইরা লাইন। তারে দেখলে আমার জ্বালা আরও বাড়বে। হ্যাঁ আমার সংসার শেষ কইরা দিসে। আমি তার বিচার চাই।’   

উল্লেখ্য, আলোকবালী পূর্বপাড়ার বাঁশ বিক্রেতা আবু কালামের ৪ ছেলে ২ মেয়ে।  মেঝো ছেলে রুবেল মিয়া (২২) কখনো রাজমিস্ত্রি অথবা দিনমজুরের কাজ করতেন। বাড়ির পাশ্ববর্তী আলোকবালী দারুস সোন্নাহ মাদ্রাসা বড় ছেলে আতিকুর মিয়া (২৫) শিক্ষকতা করেন এবং ছোট ছেলে ইয়াসিন মিয়া (১০) দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়েন।

গত সোমবার রুবেলের স্ত্রী ও সন্তান, শ্বশুর বাড়িতে যায়। বাবা তৃতীয় ভাইকে ইসমাইলকে (১৬) নিয়ে নদীতে বাঁশ পরিবহন করতে চলে যায়। ফলে বাড়িতে শুধু মা ও ছোট দুই বোন ছিল।

এরই সুযোগে সন্ধ্যায় রুবেল মাদরাসা থেকে মায়ের কথা বলে ছোট ভাই ইয়াসিনকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসে। ছোট বোন মরিয়মকে নিজ ঘরে ঘুমানোর কথা বলে রাতে মায়ের কাছ থেকে ডেকে নিয়ে আসেন। পরে দুই ভাই বোনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। দুইজনকে হত্যার পর মা কুলসুম বেগমের সঙ্গে ঘুমিয়ে থাকা অপর ছোট বোন মাহিয়াকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে রুবেল।

সবশেষ রাত ১১টার দিকে মায়ের অসুস্থতার কথা বলে রুবেল মাদরাসার শিক্ষক বড় ভাই আতিকুর মিয়াকে মায়ের কথা বলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসে। বাড়ির অদূরে পৌঁছলে হঠাৎ পেছন থেকে রুবেল ধারালো অস্ত্র দিয়ে বড় ভাইয়ের মাথায় আঘাত করতে থাকে।

ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আতিক আত্মচিৎকার শুরু করেন। ওই সময় এলাকাবাসী ছুটে এসে আতিকুরকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে গেলে অন্যদের বিষয়টি নজরে আসে।

আহত আতিকুরকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সময় বাড়ি ও মসজিদের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয় ঘাতক রুবেল। পরে বাড়ির অদূরে একটি ঝোঁপ থেকে রুবেলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে গ্রামবাসী।

সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, গ্রেফতারকৃত রুবেল ইতোমধ্যেই হত্যার দায় স্বীকার করেছে। তবে কার প্ররোচনায় বা কি কারণে হত্যা করেছে সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার করে কিছু বলছে না রুবেল।

হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনেরে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আগামী শনিবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত।   

সঞ্জিত সাহা/এআরএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।