বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা সরছে না


প্রকাশিত: ০৩:৩৩ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৫

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর নির্দেশের ৯ মাস পরও ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত মহাসড়কের অবৈধ স্থাপনা ভাঙা হয়নি। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জমি অধিগ্রহণের অধিক ক্ষতি পূরণ পেতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-জয়দেবপুর-বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী দুই পাশের জমিতে অবৈধ ঘর নির্মিত হয়েছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল-জয়দেবপুর-বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর পূর্বপাড় এলেঙ্গা পর্যন্ত ৪ লেন ৭০ কিলোমিটার মহাসড়কে কাজ শুরুর আগেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কেউ কেউ কাঁচা ধান ক্ষেত, ডোবা-পুকুর ও নিচু জমিতে বাঁশের খুঁটি দিয়ে টিনের চালের ঘর নির্মাণ করেছেন। প্রকল্পের ভূমি জরিপ কাজে নিয়োজিত এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারি ও স্থানীয় দালাল চক্রের যোগ সাজসে অধিক ক্ষতিপূরণ পেতে অর্থলোভী একটি চক্র অবৈধভাবেই নিচু জমিতে এসব টিনের ঘর ও আধাকাঁচা ঘর নির্মাণ করে চলেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই দালাল চক্রটি নিরীহ জমির মালিকদের নানা প্রতারণার ফাঁদে ফেলে জমি ভাড়া নিয়ে রাতারাতি এই ঘর নির্মাণ করছেন বলে জানা গেছে।

গত বছরের ১৩ আগষ্ট বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী মো. ওবায়দুল কাদের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরে মহাসড়কের দুইপাশ পরিদর্শনে এসে ঘটনার সত্যতা পান। তিনি মির্জাপুর সড়ক ও জনপথ অফিসে বসে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, স্থানীয় প্রশাসনকে অবৈধ এসব স্থাপনা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন । কিন্তু মন্ত্রীর নির্দেশের ৯ মাস পার হলেও রহস্যজনক কারণে এসব স্থাপনা ভাঙা হয়নি। শুক্রবার এই মহসড়কের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।

মির্জাপুর উপজেলার সহকারি কমিশনার ভূমি অফিস সূত্র জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল-জয়দেবপুর-বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন করার জন্য সরকার নীতিগত সিন্ধান্ত নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় মির্জাপুর উপজেলার ক্যাডেট কলেজ এলাকা থেকে নাটিয়াপাড়া পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করা হবে।

এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক, ওপেন ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ও আবুধাবী ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা আর্থিক সহায়তায় এ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের অধিনে মহাসড়কের দুইপাশে গাজীপুর জেলা ও টাঙ্গাইল জেলার ৮৭ দশমিক ৫১৮৫ একর জমি অধিগ্রহণ করার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে বলে সূত্রটি জানায়।

ঐ জমির মধ্যে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা অংশের জমি পড়েছে ২৩ দশমিক ৭৬৮৯ একর । আর এই জমিগুলি হচ্ছে ক্যাডেটকলেজ,হাটুভাঙ্গা, গোড়াই, নাজিরপাড়া, সোহাগপাড়া, ধেরুয়া, দেওহাটা,বাওয়ারকুমারজানি, মির্জাপুর বাইপাস,পুষ্টকামুরি, নয়াপাড়া, ইচাইর, কুরনি,ধল­া,পাকুল­া, জামুর্কি ও নাটিয়াপাড়া মৌজা।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জমি অধিগ্রহণের খবর শুনে কিছু অসাধু চক্র যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চার লেন প্রকল্পের কিছু দুর্নীতিবাজ চক্র এবং স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে ঐ সব জমির উপর অবৈধভাবে টিনের ঘর নির্মাণ শুরু করেছেন। দুর্নীতিবাজ এই চক্রটি জমি ভাড়া নিয়ে অবৈধভাবে নির্মাণ করছেন এসব স্থাপনা । জমির মালিক এবং দালাল চক্র অধিক ক্ষতিপূরণ পেতে রাতারাতি অতি নিম্নমানের উপাদান দিয়ে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে চলেছে। অধিক ক্ষতিপুরণ পেতে এসব স্থাপনার সামনে বিভিন্ন কল-কারখানার সাইন বোর্ড ঝুঁলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যারা এসব স্থাপনা নির্মান করছেন তাদের বাড়ি গাজীপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, ফরিদপুর, বগুড়া, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।

যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগ সাজস করেই অধিক ক্ষতিপূরন পেতে দালাল চক্রটি অবৈধভাবে এসব স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছে। ফলে জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল রোডের ৪ লেন নির্মাণের কাজ হবে কিনা তা অনিশ্চিত হয়ে পরেছে।
 
মির্জাপুর ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার সাখাওয়াত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, যারা এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছেন তারা জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাসত্ত্ব আইন ১৯৫০ এর ৯০ ধারার পরিপন্থি কাজ করছেন। তাই তারা অবৈধ স্থাপনার কোন টাকা পাবেন না। এই চক্রের সদস্যদের দ্রুত গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি এলাকাবাসীর।
 
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো. মাসুম আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সহযোগিতায় অচিরেই এসব স্থাপনার ভাঙ্গার কাজ শুরু হবে।

মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য একটি চক্র মহাসড়কের দুই পাশে অবৈধভাবে এসব স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অতি জরুরী।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নাজমুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অচিরেই এসব অবৈধ স্থাপনা ভাঙার কাজ শুরু করা হবে।

এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।