তারা এখন অনেক কাজে পারদর্শী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৩:০০ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সুদিন ফিরতে শুরু করেছে গাইবান্ধার সাত উপজেলার প্রতিবন্ধী শিশুদের। আগে যেখানে শিশুরা স্পষ্ট করে কথা বলতে পারতো না, লিখতে পারতো না, চিনতো না অক্ষর ও পশুপাখি। আজ সেখানে তারা নিজেরা লেখে, স্পষ্ট করে কথা বলার চেষ্টা করছে, চেনে অক্ষর ও পশুপাখি। এখন বিদ্যালয়ে আসার কথা শুনলে খুশি হয় এসব প্রতিবন্ধী শিশুরা। উপকার পেলেও প্রতিবন্ধী এসব শিশুদের জন্য বর্তমানে নেই কোনো সরকারি সহযোগিতা। ফলে বিদ্যালয়গুলো চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

সুইড বাংলাদেশ গাইবান্ধা জেলা শাখার সূত্রে জানা যায়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের অধীনে বেসরকারি সংস্থা সুইড বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে গাইবান্ধার সাত উপজেলায় ১১৬টি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি প্রতিবন্ধী শিশু লেখাপড়া করছে। প্রতি সাতজন প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য একজন করে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। বর্তমানে স্বেচ্ছাশ্রমে এসব প্রতিবন্ধী শিশুদের পাঠদান করছেন শিক্ষকরা।

গত সোমবার সকালে সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের নতুন ব্রিজ সংলগ্ন রহিম-আফতাব বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি ঘাঘট নদীর ধারে গাছ-গাছালী ঘেরা অত্যন্ত মনোরম পরিবেশ অবস্থিত। বিদ্যালয়টিতে রয়েছে ৭০ জন প্রতিবন্ধী শিশু। এল আকৃতির বিদ্যালয়টি দৈর্ঘ্যে ৬৪ ফুট ও প্রস্থ সাড়ে ১৩ ফুট। টিনশেড বিশিষ্ট বিদ্যালয়টির আংশিক নির্মাণকাজ শেষ হয় একমাস আগে।

gaibandha

বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকসহ সাতজন শিক্ষক পাঠদান করেন। নেই প্রয়োজনীয় চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ, ফ্যান, শ্রেণিকক্ষের ছাঁদ ও যানবাহনসহ বিভিন্ন উপকরণ। এত সমস্যা থাকলেও এসব শিশুদের জন্য থেমে নেই পাঠদান, ব্যয়ামসহ শারীরিক বিভিন্ন কসরত। গাইতে পারে জাতীয় সংগীতও। প্রতিবন্ধী এসব শিশুরা ছবি দেখে পশু-পাখির নাম বলতে পারছে। দেখে দেখে প্রায় ২০ ধরনের শারীরিক কসরত করতে পারে।

খোলাহাটি ইউনিয়নের ফারাজিপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ (৫২) বলেন, আমার তিন ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে মেয়ে কারিমা বেগম (১৪) ও কমলা আক্তার (১০) জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। কারিমার সবসময় শরীর কাঁপে, লিখতে পারে না। অপর মেয়ে কমলা আক্তারের পায়ের সমস্যা। তাই তাদেরকে এই স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছি। তাদের এখন অনেক উন্নতি হচ্ছে। তারা লিখতে পারছে। স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরাও করতে পারছে। যানবাহন থাকলে খুব উপকার হতো।

একই ইউনিয়নের পূর্ব কোমরনই সরকারপাড়া গ্রামের গৃহিণী জহুরা বেগম (৩০) বলেন, আমার মেয়ে সিথি আক্তার (১০) ঠিকমতো হাটতে পারে না। বাড়িতে পড়ালেখা করতে চায় না। কিন্তু সে এখন বিদ্যালয়ে আসার কথা শুনলে খুব খুশি হয়। আগের থেকে এখন চালাক হয়েছে। এই বিদ্যালয়ে এসে খুব উপকার হয়েছে। এখন সে অক্ষর ও বিভিন্ন ধরনের পশু পাখির ছবি দেখে নাম বলতে পারে।

gaibandha

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শেখ রওশন হাবীব বলেন, ৮ থেকে ১৬ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে শিশু, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করা হচ্ছে। শিশুরা জাতীয় সংগীত গাইতে পারে, শারীরিক বিভিন্ন কসরত করতে পারে। এ ছাড়া শিশুদেরকে প্রতিদিন নাস্তা হিসেবে বিস্কুট দেয়া হয়। শেখানো হয় বিভিন্ন ব্যয়াম। সুইড বাংলাদেশ থেকে আমরা আর্থিক ও সরঞ্জামাদির কোনো সহযোগিতাই পাচ্ছি না। এতে বিদ্যালয় পরিচালনা করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

বিদ্যালয়টির সভাপতি ও খোলাহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শেখ সামাদ আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, বিদ্যালয়গুলো পরিচালনার জন্য সমাজের বিত্তবান মানুষদের এগিয়ে আসা উচিত। বর্তমানে অর্থাভাবে বিদ্যালয়ের বাকি কাজ আটকে আছে। শিক্ষকরাও কোনো বেতন পাচ্ছেন না। আর এসব করতে আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এখনও অনেক প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে যারা হাটতে পারে না। তাদের পরিবারের পক্ষে রিকসাভাড়া করে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। তাই তাদের জন্য জরুরিভাবে ভ্যানগাড়ি দরকার।

সুইড বাংলাদেশ গাইবান্ধা জেলা শাখার সমন্বয়কারী ময়নুল ইসলাম রাজা মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, বিদ্যালয়গুলোকে নিয়মিত পরিচালনা করার জন্য উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। বিদ্যালয়গুলোর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যাদের লেখাপড়ার প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না, এখন তারা আগ্রহ দেখাচ্ছে।

বিদ্যালয়গুলোকে সহযোগিতা প্রদান না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সহায়তা হিসেবে সুইড বাংলাদেশ থেকে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কোনো বরাদ্দ না থাকায় শিক্ষকদের বেতন-ভাতাসহ প্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়নের জন্য কোনো সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না।

রওশন আলম পাপুল/এমএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।