দুই জঙ্গি আস্তানায় তদন্ত শেষ হয়নি আজও
২০১৭ সালে মৌলভীবাজারের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল পৌর এলাকার বড়হাটে অপারেশন ‘ম্যাক্সিমাস’ ও ফতেহপুর ইউপির নাসিরপুর গ্রামে অপারেশন ‘হিটব্যাক’। দুই জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের এক বছর পূর্ণ হলেও মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়নি।
গত বছরের মার্চে মৌলভীবাজারের পৌর এলকায় বড়হাট ও সদর উপজেলার নাসিরপুরে একই মালিকের দুটি বাড়িতে চার দিনব্যাপী দুই আস্তানার অভিযানে আত্মঘাতী হয়ে বোমা বিস্ফোরণে মারা যায় ১০ জন।
দুটি আস্তানা থেকেই পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়ে জঙ্গিরা। এতে অল্পের জন্য রক্ষা পান মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ্জালাল। এই দুটি ঘটনায় এখনো তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ।
সিলেটের আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের একদিন পর পাশের জেলা মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানার সন্ধানের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো জেলায়। দুই জঙ্গি আস্তানার ঘটনায় করা মামলা দুটি তদন্ত করছে সিআইডি।
জানা যায়, গত বছরের ২৯ মার্চের ভোর রাতে মৌলভীবাজার পুলিশ জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পৌর শহরের বড়হাট এলাকার একটি বাসা এবং সদর উপজেলার নাসিরপুরের একটি বাড়ি ঘিরে রাখে।
দুটি বাড়ির একই মালিক প্রবাসী সাইফুর রহমান। ওইদিন বিকেলেই নাসিরপুরে আসে পুলিশের বিশেষ টিম ‘কাউন্টার টেররিজম ইউনিট’ ও ‘সোয়াট’। সিসিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে নাসিরপুরে ‘অপারেশন হিটব্যাক’ নাম দিয়ে শুরু হয় অভিযান। ৩০ মার্চ বিকেলে অভিযানের ইতি টানে পুলিশ। জঙ্গি আস্তানায় ৫ শিশুসহ সাতজনের মরদেহ পাওয়া যায়। তারা সবাই আত্মঘাতী হয়।
৩১ মার্চ সকাল থেকে ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ নাম দিয়ে পৌর শহরের বড়হাটের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট। এতে আহত হয় এক পুলিশ সদস্য। ১ এপ্রিল দুপুরে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এই জঙ্গি আস্তানায় এক নারীসহ তিনজন আত্মঘাতী হয়ে নিহত হয়।
নিহত ১০ জনের ময়নাতদন্ত মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে সম্পন্ন হয়। নাসির নগরে নিহত সাতজনের পরিবার তাদের পরিচয় শনাক্ত করে। তবে তারা নিহতদের মরদেহ না নেয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে স্থানীয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ দাফন করে। বড়হাটের জঙ্গি আস্তানায় নিহত তিনজনের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।
জঙ্গি অভিযান সমাপ্তের পর পুলিশ বাদী হয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পৃথক দুটি মামলা করে। গত বছরের জুলাইয়ে মামলার তদন্তভার পায় সিআইডি।
এরপর সিলেট বিভাগের সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি টিম ঘটনাস্থল দুটি পরিদর্শন করে। ক্রাইমসিন সংগ্রহের জন্য দীর্ঘদিন বাড়ি দুটি হেফাজতে রাখে পুলিশ। গত বছরের আগস্টে জঙ্গি আস্তানাখ্যাত দুটি বাড়ি তত্ত্বাবধায়ক জুয়েলের কাছে বুঝিয়ে দেয় সিআইডি।
এ বিষয়ে সিআইডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুস ছালেক জাগো নিউজকে জানান, মামলা দুটি নিয়ে তদন্ত অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে তদন্তের অনেক ধাপ সফলতার সঙ্গে অতিক্রম হয়েছে। বড়হাটে নিহতের একজন মাফুজুরকে শনাক্ত করা গেছে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ্জালাল জাগো নিউজকে জানান, জঙ্গিদের পেছনে দেশি-বিদেশি অনেক সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত। তাই এদের সন্ধান পেতে তদন্তে একটু সময় লাগছে।
রিপন দে/এএম/পিআর