কবুতরের জন্য জেলা প্রশাসকের ভালোবাসা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শেরপুর
প্রকাশিত: ০৫:১৯ পিএম, ০৭ জুন ২০১৮

শেরপুর কালেক্টরেট ভবনের ছাদের পশ্চিম পাশে দীর্ঘদিন ধরে বেশকিছু কবুতর বাসা বেঁধে বসবাস করছে। স্থানীয় একজন লোক কবুতরগুলোকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় খাবার দিয়ে যান।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন কালেক্টরেট চত্বরের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করার সময় বিষয়টি তার নজরে আসে। দেখতে পান, একজন লোক প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিয়ম করে কালেক্টরেট ভবনের পশ্চিম পাশে কিছু কবুতরকে খাবার দিয়ে যাচ্ছেন।

কবুতরগুলো সেই খাবার খেয়ে আবার কালেক্টরেট ভবনের ছাদে চলে যায়। এখানে-সেখানে এলোমেলো বসবাস করছে কবুতরগুলো। ঝড়-বাতাস, বৃষ্টি-বাদলেও কবুতরগুলো ওই স্থান ছেড়ে যায় না।

একদিন জেলা প্রশাসক ওই লোকটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, কেন তিনি এভাবে কবুতরকে খাবার দিয়ে যাচ্ছেন। ওই লোক জেলা প্রশাসককে জানান, কবুতরগুলো ‘জালালি কবুতর’। তার বাবাও ওই কবুতরগুলোকে এভাবে খাবার দিয়েছেন। বাবার নির্দেশে তিনিও দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত কাজটি করে যাচ্ছেন। ঘটনাটি জেনে অবাক হন জেলা প্রশাসক।

একপর্যায়ে সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে কবুতরগুলো যেহেতু কালেক্টরেট ভবনে রয়েছে, সেজন্য তাদের নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নেন জেলা প্রশাসক।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছোট ছোট খোপ করে কবুতরের বাস উপযোগী টিনের চালাসহ কাঠের তৈরি ছোট ঘর নির্মাণ করা হয়। প্রাথমিকভাবে ১০টি ঘর বানানো হয়, যার প্রত্যেকটিতে ৯টি করে কবুতর নিজের মতো করে বসবাস করতে পারবে। প্রায় তিন শতাধিক কবুতর সেখানে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৯০টি কবুতরের ঘর বানানো হলেও পর্যায়ক্রমে আরও ঘর বানানো হবে বলে জানিয়েছেন নেজারত-ডেপুটি-কালেক্টর (এনডিসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

গত ৫ জুন মঙ্গলবার বিশ্ব পরিবেশ দিবসে জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন অতিথিদের নিয়ে কবুতরের জন্য বানানো ঘরগুলো উদ্বোধন করেন এবং বসবাসের স্থানে স্থাপন করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জন কেনেডি জাম্বিল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাইয়্যেদ এম. মুরশিদ আলী, সমাজকর্মী রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, জেলা মহিলা পরিষদ সভানেত্রী জয়শ্রী দাস লক্ষ্মী, ওয়ার্ল্ড ভিশন শেরপুর এলাকা প্রকল্প ব্যবস্থাপক লিমা হান্না ও উদীচী জেলা সভাপতি তপন সারোয়ার প্রমুখ।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে শতাধিক কবুতরের বসবাস শেরপুর জেলা প্রশাসকের অফিস ভবনে। বংশ বৃদ্ধি হয় প্রতিনিয়ত। বসবাসের ভালো ব্যবস্থা না থাকার কষ্টে দিন কাটে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে কবুতরগুলোর বসবাসের জন্য নতুন ঘর করে দেয়া হয়। এবার নিরাপদে বসবাস করতে পারবে কবুতরগুলো।

তিনি বলেন, একজন মানুষ প্রতিদিন নিঃস্বার্থে কবুতরের খাবার যোগাচ্ছে। আর আমি কবুতরগুলোর জন্য নিরাপদ আবাস দিতে পারবো না। তাতো হতে পারে না। এজন্য কবুতরের বাসা বেঁধে দিয়েছি।

হাকিম বাবুল/এএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।