১২ সহপাঠীকে নিয়ে বাবার স্বপ্নপূরণ করলেন ডা. তৃপ্তি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শেরপুর
প্রকাশিত: ১০:০৪ পিএম, ০৮ জুন ২০১৮

তিন নেপালিসহ সদ্য এমবিবিএস পাস করা ১২ তরুণ চিকিৎসক কয়েক হাজার দরিদ্র-অসহায় রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন।

শুক্রবার শেরপুর সদরের পাকুড়িয়া ইউনিয়নের চৈতনখিলা গ্রামে একটি মেডিকেল ক্যাম্প করে তারা এ চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, রোগী দেখে পরীক্ষ-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থাপত্র দেয়ার পাশাপাশি রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধও দেয় হয়েছে।

বাবার স্বপ্নপূরণ করতে সহপাঠী চিকিৎসকদের নিয়ে গ্রামের দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবার এই সুযোগ করে দেন পাকুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা ডা. হালিমা আক্তার তৃপ্তি। তিনি রাজধানীর শিকদার মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য এমবিবিএস পাস করেছেন। ডা. তৃপ্তি পাকুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ মো. হায়দার আলীর মেয়ে।

পাকুড়িয়ার চৈতনখিলা নিজাম উদ্দিন মডেল কলেজে দিনভর চলা এই মেডিকেল ক্যাম্পে পাকুড়িয়া ইউনিয়ন ও আশপাশের গ্রামের প্রায় তিন হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুকে ব্যবস্থাপত্রসহ ওষুধ প্রদান করা হয়।

চিকিৎসক দলে ছিলেন- ডা. আস্থা দাওয়ারী (নেপাল), ডা. নিরঞ্জনা থাপা (নেপাল), ডা. সূষমা ভান্ডারি (নেপাল), ডা. মোহাম্মদ আলী বাবু, ডা. গোলাম রব্বানী, ডা. জুঁইপাল, ডা. শারমীন আক্তার তাপতী, ডা. সালমান রহমান ববি, ডা. ইফফাত আরা জুঁই, ডা. সোনিয়া আক্তার তুলি, ডা. ইশিতা জাহিদ বন্যা।

Sherpur-Pic-2

তরুণ এই চিকিৎসদের চিকিৎসা সেবা ও বিনামূল্যে ওষুধ পেয়ে দারুণ খুশি গ্রামের সাধারণ রোগীরা।

গণই ভরুয়াপাড়া গ্রামের চাতাল শ্রমিক হালিমা বেগম (৪২) বলেন, ‘মেল্যাদিন (দীর্ঘদিন) ধইরা পরসাবের জালাপুড়া আর পেটের ব্যথায় ভুগতাছিলাম। কিন্তু ট্যাহার অভাবে ডাক্তর দেহাবার পাইতাছিলাম না। আইজন সুযোগ পাই মাগনা ডাক্তর দেহাইলাম। ওরা দেইখখা, পরীক্ষা কইরা ওষুধপত্রও মাগনা দিছে। কইছে চিন্তা না করতে, বালা (ভালো) হয়ে যাবে।’

বটতলা এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর রহমত আলী (৩৮) বলেন, ‘আমার আমাশা(আমাশয়)-পেট খারাপের সমস্যা। বালা অয় না। গরিব মানুষ, আমরাতো ট্যাহার অভাবে আর ডাক্তর দেহাবার সুযোগ পাইন্না। হাসপাতালে গেলেও সুময়মতো ডাক্তর মিলে না। দোকান থাইক্কা ওষুধ কিন্না খাই। এই বালা, এই খারাপ। কিন্তু এইনো (এখানে) ডাক্তরেরা আমগরে খুব বালা কইরা দেকছে, ওষুধ দিছে। আল্লায় হেগরে বালা করুক।’

ডা. হালিমা আক্তার তৃপ্তি বলেন, আমার বাবার ইচ্ছা ছিল, আমি যেন ডাক্তারি পাস করার পর প্রথমে যেন নিজ এলাকার মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেই। এই মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে সেই সুযোগ হলো। বাবার স্বপ্নপূরণ করতে পেরে গর্ববোধ হচ্ছে।

ডা. তৃপ্তির বাবা পাকুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হায়দার আলী বলেন, আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল মেয়ে ডাক্তার হয়ে দেশের মানুষের সেবা করবে এবং দেশের কল্যাণে কাজ করবে। আজ আমার আশা পূরণ হয়েছে। এতে আমি খুবই খুশি।

তিনি জানান, এ মেডিকেল ক্যাম্পে দুস্থ ও অসহায় মানুষদের জন্য তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দেড় লাখ টাকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।

নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ শেরপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ মেডিকেল ক্যাম্প তরুণ চিকিৎসকদের এক মহৎ উদ্যোগ। দেশ-বিদেশের তরুণ চিকিৎসকরা কয়েক হাজার রোগীকে চিকিৎসা ও মানবিক সেবা দিয়ে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।

এমএএস/এমবিআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।