ছাত্রলীগের দখলমুক্ত করতে এমসি কলেজের ছাত্রাবাস বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ০৯:৩৬ পিএম, ০৬ আগস্ট ২০১৯

সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজ (এমসি) ছাত্রাবাস ছাত্রলীগের হাত থেকে দখলমুক্ত করতে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (৫ আগস্ট) মধ্যরাতে ছাত্রলীগের একদল বহিরাগত এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে প্রবেশ করে কয়েকটি কক্ষের দখল নেয়ার পর দুই পক্ষে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার ছাত্রাবাস বন্ধ করে পুলিশের পাহারায় দখলমুক্ত করা হয় ছাত্রাবাসটি।

ছাত্রাবাস বন্ধ ও পুলিশ পাহারায় আবাসিক ছাত্রদের নিরাপদে বের করে দেয়া হয়েছে জানিয়ে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ বলেন, রাতে কয়েকটি কক্ষে বহিরাগতদের অবস্থান নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে উত্তেজনা ছিল। এ পরিস্থিতি কাটাতে ছাত্রবাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঈদের ছুটির পর কলেজ খুললে ছাত্রাবাসে থাকার বৈধতার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে আবাসিক ছাত্রদের ছাত্রাবাসে তোলা হবে।

ছাত্রলীগ ও কলেজ সূত্র জানায়, সোমবার রাত ৯টা থেকে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ সক্রিয় হয় ছাত্রাবাসে। এক পক্ষ বহিরাগতদের অবস্থান ঠেকানোর চেষ্টা করে। অন্য পক্ষ ছাত্রাবাসে নিজেদের দখল রাখতে তৎপর হয়। এ দুই তৎপরতায় লাঠিসোটাসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষের প্রস্তুতিতে ছিল দুই পক্ষ। রাতভর এ উত্তেজনার পর সকালে কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে ছাত্রাবাসে পুলিশ মোতায়েন করে। এ সময় কলেজের শিক্ষা কাউন্সিলের বৈঠকে ছাত্রাবাস বন্ধের সিদ্ধান্ত হলে পুলিশকে দিয়ে আবাসিক ছাত্রদের ছাত্রাবাস থেকে নিরাপদে বের করে দেয়া হয়।

পুলিশ পাহারায় ছাত্রদের বের করে দেয়ার সময় মঙ্গলবার বিকেলে ছাত্রাবাস এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের কোনো তৎপরতা নেই। চারটি ব্লকের ছাত্রাবাসের ৩৮৩ কক্ষের মধ্যে কার্যালয় ও টিচার্স কক্ষসহ ১৯টি কক্ষে ছাত্রলীগের অবৈধ দখলে ছিল।

ছাত্রাবাস তত্ত্বাবধায়কের দফতর সূত্র জানায়, গত দুই দিন ধরে আবাসিক ছাত্র এবং বহিরাগতদের মধ্যে টান টান উত্তেজনা চলছে। দিনে এবং রাতে একাধিকবার সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। বহিরাগতরা জড়ো হয়ে ছাত্রাবাসে হামলার প্রস্তুতি নিলে ছাত্রাবাসের ছাত্ররাও প্রতিরোধের পাল্টা প্রস্তুতি নেয়।

গত রোববার অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র আসিফকে পরীক্ষার হল থেকে ধরে এনে সাইফুর ও রাহীর নেতৃত্বে ১০-১২ জন বহিরাগত মারধর করে। আসিফ মাথায় ছুরিকাঘাতে আহত হন। এর জের ধরে রাতে শ্রীকান্ত আবাসিক হলের ছাত্র অপু তালুকদারের ওপর আরামবাগ এলাকায় বহিরাগতরা হামলা চালালে পরিস্থিতির অবনতি হয়।

সূত্র জানায়, ছাত্রাবাসের ২ নম্বর ব্লকের অফিস কক্ষ দখল করেছিলেন ছাত্রত্ব শেষ হওয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক স্কুলবিষয়ক সম্পাদক হোসাইন আহমদ। ৫ নম্বর ব্লকে শিক্ষক কোয়ার্টার দখল করেছিলেন চাকরিজীবী সুশান্ত দাশ, দেলোয়ার হোসাইন রাহি (মাস্টার্স শেষ), সাইফুর রহমান, সাদিকুর রহমান (ছাত্রত্ব নেই)। ৫ নম্বর ব্লকের অফিস কক্ষ দখল করেছিলেন রুবায়েল আহমদ। নতুন ভবনে অবৈধভাবে সিট দখল করেছিলেন জাবের, জুবায়ের, আবদুর রহমান, সেলিম আহমদ, মাছুম আহমদসহ (ছাত্রত্ব নেই) ১৫ জন বহিরাগত।

ছাত্রলীগ নেতা হোসাইন আহমদ বলেন, আমি ছাত্রাবাস দখলের সঙ্গে জড়িত নই। ছাত্রাবাস আমার অনুসারী কারো দখলে ছিল না।

তাহলে নাম এল কী করে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছাত্রলীগেরই নতুন একটি অংশের তৎপরতায় এমনটি হয়েছে। এ তৎপরতার সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জয় চৌধুরী যুক্ত আছেন।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, তার নাম অযথা ব্যবহার করা হয়েছে। ছাত্ররা ছাত্রাবাসে থাকবে এটাই তো নিয়ম। এ ক্ষেত্রে বিরোধিতা যারা করবেন, তারা আসলে ছাত্রাবাসকে বহিরাগতদের আখড়া বানাতে চান।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৮ জুলাই ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষের জের ধরে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছিল ছাত্রাবাসের ৪২টি কক্ষ। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রচেষ্টায় ছাত্রাবাস আগের কাঠামোয় পুনর্নিমাণ করা হয়।

২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর নুরুল ইসলাম নাহিদ পুনরায় নির্মিত ছাত্রাবাস উদ্বোধন করেন। এ ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই ছাত্রলীগ নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে ভাঙচুর করে ছাত্রাবাস। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় এক সপ্তাহ বন্ধ রাখার পর ওই বছরে ২৯ জুলাই ছাত্রাবাস খোলা হয়।

অগ্নিকাণ্ড ও ভাঙচুরের ঘটনার পর থেকে ছাত্রাবাসে আবাসিক ছাত্রদের বসবাস এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে ছাত্রলীগ। এই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই ভাঙচুরের ঘটনার পর সোমবার রাতে দখলের মুখে ছাত্রাবাস বন্ধ করে দেয়া হলো।

ছামির মাহমুদ/আরএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।