পুলিশ কনস্টেবলের চেষ্টায় মূক-বধির যুবক ফিরে পেল পরিবার
খাদ্যভাসের ধারণার ওপর নির্ভর করে পুলিশ কনস্টেবলের চেষ্টায় এক মূক ও বধির যুবক খুঁজে পেয়েছে তার অভিভাবকদের। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় আনুষ্ঠানিকভাবে মূক ও বধির রুবেল হোসেনকে (২৫) তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা।
নওগাঁর পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রুবেল হোসেনের বাড়ি নীলফামারী সদর উপজেলার কচুকাটা উত্তরপাড়া গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে।
জানা গেছে, গত ২৪ ডিসেম্বর নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আইহাই ইউনিয়নের সরলী গ্রামে মূক ও বধির রুবেল হোসেন ঘোরাঘুরি করছিলেন। স্থানীয়রা তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও কোনো সদুত্তর পাননি। এতে স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহের দানা বাঁধে। পরে বিষয়টি থানায় জানানো হয়। তাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মূক ও বধির বলে শনাক্ত হন। তার কাছে তিনটা মোবাইল ফোন থাকলেও তা ছিল অকেজো। তিনি শুধু নিজের নাম লিখতে পারেন। কোনো কিছু বলতে বা লিখতে পারেন না।
পরে তার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করে সন্ধান চাওয়া হয়। ঘটনার পর থেকে রুবেল হোসেন থানাতেই থাকা ও খাওয়া-দাওয়া করত। রুবেল হোসেনের দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয় থানার কম্পিউটার অপারেটর কনস্টেবল তৌহিদকে। রুবেলের খাবারের খাদ্যাভ্যাসের বিষয়টি মাথায় আসে কনস্টেল তৌহিদের। এরপর তিনি নিজ থেকে চেষ্টা শুরু করেন। অবশেষ সফলও হোন। গত দেড় বছর থেকে তিনি সাপাহার থানায় কর্মরত রয়েছেন।
কনস্টেবল তৌহিদ বলেন, প্রথমে ধারণা করলাম রুবেলের বাড়ি উত্তরাঞ্চলের কোনো জেলায় হবে। এরপর তার খাদ্যাভ্যাস দেখে অনেকটা আন্দাজ করলাম রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার হতে পারে। পরবর্তীতে ওই জেলাগুলোর ওসি স্যারদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করি। এতে অনেক স্যার সাড়া দিয়েছেন। তবে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারেননি। এরপর গুগলের সহযোগিতা নিয়ে ওইসব জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করি। একপর্যায়ে নীলফামারী জেলা সদরের কচুকাটা উত্তরপাড়া গ্রামে তার পরিবারের সন্ধান মেলে।
তিনি বলেন, রুবেল বিশেষ করে মাছের মাথা বেশি পছন্দ করতো। মাংস কম খেত। দিনে ৯/১০টা পান খেত।
রুবেলের বাবা তৈয়ব আলী বলেন, গত ২০ দিন আগে এক বিকেলে বাবা-ছেলে এক সঙ্গেই ছিলাম। সেদিন তার হাত খরচের জন্য ৫০০ টাকা দিয়েছিলাম। তারপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সর্বশেষ নীলফামারী বাসস্ট্যান্ডে স্থানীয়রা তাকে দেখেছিল বলে জানায়। এবার দিয়ে চার বার সে বাড়ি থেকে ভুল করে বাহিরে চলে গেছে।
তিনি আরও বলেন, চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে রুবেল সবার ছোট। অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ছেলের মোবাইলের নেশা আছে। মোবাইলে বাংলা সিনেমা ও হিন্দি গান শুনতে পছন্দ করে।
নওগাঁর পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের মনে হচ্ছে অনেক বড় একটা সফলতা পেয়েছি। ছেলেটার অনেক বড় বিপদ হতে পারতো। সে বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে পেরেছি। তবে তার কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফারজানা হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাপাহার সার্কেল) বিনয় কুমার, সাপাহার থানার ওসি আব্দুল হাই, সদর থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আব্বাস আলী/আরএআর/জেআইএম