আটকেপড়া দিনমজুরদের খাবার দিয়ে বাড়ি পাঠালেন এমপি
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ফরিদপুরে শ্রম বিক্রি করতে আসা দিনমজুররা করোনাভাইরাসের আতঙ্কে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। ফরিদপুরের বিভিন্নস্থানে অনাহারে দিন কাটছিল তাদের।
রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়া নিম্নআয়ের প্রায় ৩ শতাধিক শ্রমজীবী মানুষের (যারা অন্যের বাড়িতে কাজের জন্য বিক্রি হয়) পাশে দাঁড়ালেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি।
অসহায় মানুষদের দিয়েছেন খাদ্য সহায়তা, নিজ খরচে তাদের বাড়ি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। অর্ধাহারে অনাহারে থাকা অসহায় মানুষগুলো মুখে হাসি নিয়ে যার যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
জানা যায়, দেশের নাটোর, রংপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও নওগাঁ জেলার প্রায় তিন শতাধিক দিনমজুর ফরিদপুরে শ্রম বিক্রি করতে এসে করোনা পরিস্থিতিতে আটকে পড়েন। এ মানুষগুলো কয়েকদিন শহরের বাসস্ট্যান্ড, নতুন টার্মিনাল, ভাঙ্গা রাস্তার মোড়সহ বিভিন্নস্থানে অর্ধাহারে অনাহারে দিনযাপন করছিলেন। কাজ না থাকায় পকেটে ছিল না কোনো অর্থ। বাড়িতেও যেতে পারছিলেন না হতদরিদ্র মানুষগুলো। এই অনাহারি মানুষগুলোর সাহায্যার্থে এগিয়ে এলেন ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি।
শনিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে শহরের ব্রাহ্মণকান্দা বাইপাস সড়কে সবাইকে আনা হয়। সাউথ লাইন পরিবহনের ৩টি গাড়ি নাটোর, রংপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও নওগাঁয় হতদরিদ্র মানুষদের তাদের নিজ নিজ জেলায় পৌঁছে দেয়ার জন্য যাত্রা শুরু করে। গাড়িতে উঠার সময় প্রত্যেককে খাদ্যসামগ্রী, ১শ টাকা ও একটি করে মাস্ক দেয়া হয়।
ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফরিদপুর জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী বরকত ইবনে সালাম জাগো নিউজবে বলেন, গতকাল আমার সাইট ভিজিটের জন্য আসি। এসে দেখি ২ থেকে ৩শ লোকের সমাগম। সবাই অনাহারে জীবন যাপন করছে। গত দুইদিন আগে সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এরা কোনো জায়গায় বিক্রি হতে পারেনি।
তিনি বলেন, আমি আমাদের ফরিদপুরের উন্নয়নের রুপকার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপিকে বিষয়টি জানাই। তিনি তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেন এবং তাদের যার যার বাড়িতে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেন। ওই সময়ই এমপি মহোদয়ের নির্দেশে ওই মানুষগুলোর জন্য খিচুরি রান্না করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করি। পরে সাউথ লাইন পরিবহনের তিনটি বাসে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এসময় তাদের কিছু খাদ্যসামগ্রী, নগদ ১শ টাকা ও একটি করে মাস্ক দিয়েছি।
দেশের এই পরিস্থিতিতে সকল বিত্তবানকে নিম্নআয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান চৌধুরী বরকত।
বাড়ি ফিরে যাওয়া কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা মুনতাজ প্রামাণিক বলেন, আমরা গত ২-৩ দিন ধরে এখানে পড়ে আছি। মানুষের বাড়িতে পইরাত দিয়ে খাই। আমাগো রাতে খিচুড়ি রানদে খাবার দিয়েছে সে অনেক ভালো মানুষ। আবার এখন ভালো গাড়িতে করে বাড়ি পাঠাই দিতেছে। আল্লাহ তারে বাঁচাই রাখুক।
রাজশাহী ফিরে যাওয়া দিনমজুর কাওসার হোসেন বলেন, দুইদিন অনাহারে কাটিয়েছি। দুইদিন পর গতরাতে খিচুরি খেয়েছি। এখন বাড়ি যাচ্ছি। পরিবারের খোঁজ নিতে পারিনি গত কয়েকদিন। দোয়া করি আল্লাহ তাকে ভালো রাখুক।
এদিকে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতিতে ফরিদপুর শহরের ২৭টি ওয়ার্ডের ১৫ হাজার পরিবার এবং সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ১৫ হাজার মোট ৩০ হাজার দরিদ্র ও অসহায় খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বিতরণের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ফরিদপুরে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে ৯১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৫৬৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়। এর মধ্যে ছুটি দেয়া হয়েছে ৫৩৪ জনকে।
বি কে সিকদার সজল/এমএএস/জেআইএম