একটি কলা, হাজার কোটি টাকা দাম এর!
বাজার খালি করছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে বাজারের এক কোণায় বসে থাকা এক বৃদ্ধ (৭০) ও তার মেয়েটির দিকে চোখ পড়ল। হাতে দু’তিনটি কাগজ নিয়ে ছোটাছুটি করছেন। ত্রাণের ফরম পূরণ করবেন। কাকে দিয়ে করবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না। কাছে গেলাম। জানতে চাইলাম, কি হয়েছে চাচা?
তিনি উত্তরে বললেন, কিছু না বাবা। এই কাগজটা লিখতে হবে। পাশের ছোট্ট চায়ের দোকানটা আমার। ওর মধ্যেই থাকি আমি। কিছু নেই খাওয়ার। খাই না। পেটে ক্ষুধা।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওইসময় তাকে উপহার খাদ্যসামগ্রী দেয়া হলো। ওই সময় আমি পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
রোববার দুপুর পৌনে ১টা গোপালগঞ্জ বড় বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সালাউদ্দিন দীপু। মোবাইল কোর্ট, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ লোকজনের ছুটাছুটি। একটা হুলস্থুল অবস্থা। বাজার খালি করতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া অন্য কোনো দোকান খোলা আছে বা অপ্রয়োজনে কেউ বাইরে বের হচ্ছে কিনা তা তদারকির কাজ। ওই সময়ের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে কথাগুলো বলছিলেন তিনি।
এখানেই গল্পের শেষ নয়। এ পর্যায়ে ওই বৃদ্ধ দোকানের মধ্য থেকে ৭/৮টি কলা নিয়ে আসলেন। বললেন, বাবা ! মনে কিছু করো না। তোমাদের মুখ শুকায় গেছে। অনেকক্ষণ কিছু খাওনি হয়তো। এই কলা কয়টা খাও। তিনি জোর করে হাতে একটা করে কলা গুজে দিলেন। আমার সঙ্গে থাকা একজন পুলিশ সদস্যের চোখ থেকে পানি বের হয়ে গেল দেখলাম। আমার চোখ লাল হয়ে গেল। জড়িয়ে ধরতে মন চাইলো লোকটাকে। পারলাম না।
পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষটিকে উপহার দিলাম আজ। আর ওই সবচেয়ে ধনী মানুষটির কাজ থেকে জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহারটা পেলাম আমি। একটি কলা ! হাজার কোটি দাম এর।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবেলা ও মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বাজি রেখে নিরলসভাবে দিন-রাত এক প্রান্তর থেকে অন্য প্রন্তরে ছুটে চলছেন শেখ সালাউদ্দিন দীপু।
অসহায় ও ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে গিয়ে হাজির হচ্ছেন। ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপহার খাদ্যসামগ্রী। মনে তার নেই কোনো সংশয়। বাড়িয়ে দিয়েছেন সহানুভূতির হাত।
তিনি মনে করেন, এটা একটি যুদ্ধ।আত্মপ্রত্যয় আর চ্যালেঞ্জ নিয়ে সকলকে এ যুদ্ধের মোকাবেলা করতে হবে। এ যুদ্ধে করোনার পরাজয় হবে। বেঁচে থাকবে মানবতা।
হুমায়ূন কবীর/এমএএস/এমকেএইচ