করোনা জয় করে স্বামী-সন্তানের সঙ্গে বাড়ি ফিরলেন অন্তঃসত্ত্বা
ঢাকা থেকে করোনা পজিটিভ নিয়ে পালিয়ে কুষ্টিয়ায় আসা সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা শিল্পী আরা খাতুন (২৫) অবশেষে করোনাকে জয় করলেন। এছাড়াও তার স্বামী তফিকুল ইসলাম (৩১) ও একমাত্র মেয়ে ফাতেমাও করোনায় আক্রান্ত হন। তারা সবাই সুস্থ হয়ে আজ বাড়ি ফিরেছেন।
শনিবার বিকেলে এক আনন্দঘন পরিবেশে কুষ্টিয়া হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসা শেষে স্বপরিবারে জেলার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন এই দম্পতি। এ সময় সিভিল সার্জনসহ চিকিৎসকরা তাদের হাতে ফুল এবং উপহার সামগ্রী তুলে দেন।
পেশায় প্রাইভেট কারচালক তফিকুল ইসলাম কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামের ভেগল মালিথার ছেলে। তফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শিল্পী আরা খাতুন তাদের চার বছর য়সী মেয়ে ফাতেমাকে নিয়ে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকায় বসবাস করেন।
১৯ এপ্রিল তফিকুল পিজি হাসপাতালে গিয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসেন। একদিন পর ২১ এপ্রিল পিজি থেকে জানানো হয় তার করোনা পজিটিভ। পর দিন ২২ এপ্রিল স্ত্রী শিল্পী আরা খাতুন আর মেয়ে ফাতেমাকেও করোনা পরীক্ষা করা হয়। পরদিন ২৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে পিজি হাসপাতাল থেকে মুঠোফোনে জানিয়ে দেয়া হয় তার স্ত্রীও করোনা পজিটিভ। তবে মেয়ে ফাতেমার নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। এ সময় চিকিৎসকরা আক্রান্ত ওই দম্পতিকে ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তারা ঢাকায় ভর্তি না হয়ে গত ২৪ এপ্রিল সকালে ঢাকা থেকে ভেঙে ভেঙে সড়ক পথে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
রাজবাড়ীতে পৌঁছানোর পর পুলিশ তাদেরকে আটক করে। দফায় দফায় আলোচনা ও নানা ঘটনার পর শেষ পর্যন্ত ওই দিন রাতেই আক্রন্ত ওই দম্পতির ঠাঁই হয় কুষ্টিয়া জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্ধারিত আইসোলেশন ওয়ার্ডে। কদিন পরে গত ২৮ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষায় তাদের একমাত্র মেয়ে ফাতেমারও করোনা শনাক্ত হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় দুই দফায় নমুনা পরীক্ষায় তিন জনেরই করোনা নেগেটিভ আসায় চিকিৎসকরা তাদেরকে সুস্থ ঘোষণা করে শনিবার বিকেলে হাসপাতাল ত্যাগের ছাড়পত্র দেন। এ সময় পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাতের পক্ষ থেকে করোনা জয়ী এই দম্পতির হাতে পুষ্টিকর খাবার এবং উপহার সামগ্রী তুলে দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোস্তাফিজুর রহমান।
সিভিল সার্জন এএইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম ও কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার তাদেরকে ফুল উপহার দেন।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বিদায় নেয়ার সময় তফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমার স্ত্রী ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। যখন আমাদের দু’জনেরই করোনা পজিটিভ আসে সত্যি কথা বলতে গেলে বাঁচার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। বিশেষ করে একমাত্র মেয়ে ফাতেমাকে নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যদি মরতেই হয় তাহলে গ্রামে গিয়েই মরব। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা হই। আল্লার অশেষ রহমত আর চিকিৎসকদের চেষ্টায় আজ আমরা স্বপরিবারে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছি।
কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, এ নিয়ে কুষ্টিয়া আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ৫ জন সুস্থ হয়ে করোনাকে জয় করে বাড়ি ফিরে গেল। এর আগে গত ১মে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের গট্রিয়া গ্রামের ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ আক্কাছ আলী এবং একই উপজেলার চর মহেন্দপুর গ্রামের সামাদ বিশ্বাস। কুষ্টিয়া জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১৮ জন।
আল-মামুন সাগর/এফএ/জেআইএম