করোনা নিয়ে নতুন তথ্য, ফেনীতে মৃত্যুর ৬ ঘণ্টা পরও পজিটিভ
ফেনীতে শ্বাসকষ্ট নিয়ে মৃত্যুর ছয় ঘণ্টা পর সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (০৯ জুন) সকালে ফেনীর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সরবরাহকৃত নমুনার পরীক্ষার ফলাফলে এ তথ্য পাওয়া যায়।
ফলে স্বাস্থ্য বিভাগ ঘোষিত মৃত্যুর তিন ঘণ্টা পর করোনাভাইরাসের জীবাণুর কার্যকারিতা না থাকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এতে করে মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে সংক্রমণ বিস্তার নিয়ে ফেনীতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একই সঙ্গে করোনা নিয়ে নতুন তথ্য সবার সামনে এসেছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে ফেনী শহরের একজন প্রবীণ সংগঠকের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর ছয় ঘণ্টা পর তার লাশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়ায় নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হন ওই ব্যক্তি। রাত দেড়টায় তার মৃত্যু হয়। তাৎক্ষণিক টেকনোলজিস্ট না থাকায় শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় তার লাশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার সকালে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ওই ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ বলে জানানো হয়।
তবে করোনায় মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে জীবাণুর কার্যকারিতা তিন ঘণ্টা পর থাকে না বলে সারা বিশ্বে স্বীকৃত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য সামনে এনে স্বাস্থ্য অধিদফতর একই তথ্য প্রচার করেছে। ৩ জুন দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন সম্পর্কে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) নাসিমা সুলতানা বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির শরীরে তিন ঘণ্টা পর আর ভাইরাসের কার্যকারিতা থাকে না।
এখন প্রশ্ন হলো; তাহলে ফেনীর এই ব্যক্তির নমুনা ছয় ঘণ্টা পর সংগ্রহ করা হলেও কীভাবে করোনা পজিটিভ এলো?
ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সংক্রমিত কোনো ব্যক্তির দেহে ভাইরাসের পরিমাণ (ভাইরাল লোড) বেশি হলে মৃত্যুর দীর্ঘসময় পরও ভাইরাসের উপস্থিতি থাকতে পারে। আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে ভাইরাস ট্রান্সপোর্ট মিডিয়াম পদ্ধতিতে নমুনা পাঠানো হয়। এ পদ্ধতিতে ফলাফল ভালো পাওয়া যায় এবং মৃত্যুর তিন ঘণ্টা পরও পজিটিভ হতে পারে।
বিএমএ ও স্বাচিপ ফেনী জেলা সভাপতি অধ্যাপক ডা. সাহেদুল ইসলাম কাওসার বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসরণ করে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ, সারা বিশ্ব তা করে। করোনাভাইরাসের অনেক কিছুই এখন অনাবিষ্কৃত। ইতোপূর্বে প্রাপ্ত নমুনার ভিত্তিতে তিন ঘণ্টার কথা বলা হয়ে থাকতে পারে। এর ব্যতিক্রম এলে তা নিয়েও গবেষণা হবে। তবে আরও অনেক কিছুই সামনে আসতে পারে; যা আমরা আগে ভাবিনি বা দেখিনি।
জেলা করোনা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সমন্বয়ক ডা. শরফুদ্দিন মাহমুদ বলেন, মঙ্গলবার পরীক্ষাগার থেকে ঘোষিত ১২টি নমুনার ফলাফলে সাতটি পজিটিভ এসেছে। এদের মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় চারজন, দাগনভূঞায় একজন ও অন্যান্য উপজেলার দুজন রয়েছেন। মঙ্গলবার নতুন করে ২৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ফেনীতে মোট দুই হাজার ৮৭৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। দুই হাজার ১০১ জনের ফলাফলে ৩২০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষাগারে ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছে ৭৭৮টি নমুনা।
এ পর্যন্ত ফেনীতে ৩২০ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ১২৫ জন, সোনাগাজীতে ৩৯ জন, দাগনভূঞায় ৯৩ জন, ছাগলনাইয়ায় ৩৬ জন, ফুলগাজীতে নয়জন, পরশুরামে ১০ জন ও অন্যান্য উপজেলার আটজন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৬৮ এবং মারা গেছেন সাতজন।
রাশেদুল হাসান/এএম/জেআইএম