এসপির এক ছকে বাজিমাত, আড়াইশ মামলা কুপোকাত

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০৩:০০ পিএম, ০৩ নভেম্বর ২০২০

আন্তরিকতার সঙ্গে একটি ছক তৈরি করে মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করায় মৌলভীবাজার জেলায় এক বছরে মারামারি মামলা কমে গেছে ২৫৫টি। একটি মামলায় গড়ে ১০ জন লোক জড়িত থাকলে ২৫৫টি মামলায় অন্তত ২ হাজার ৫৫০ জন লোক মামলাজট থেকে বেঁচে গেছেন। যদিও মারামারির মামলায় ১০০ থেকে দেড়শ আসামির অন্তর্ভুক্তিও স্বাভাবিক ব্যাপার।

জেলায় মোট মামলার প্রায় ৩২ শতাংশ ছিল মারামারি মামলা। যার বেশিরভাগই প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে করা হতো। কিন্তু বর্তমানে সে পথ বন্ধ করে দিয়েছেন পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ। এতে মামলার জট যেমন কমেছে তেমনি মিথ্যা মামলায় হয়রানিও কমেছে।

জানা যায়, স্বাভাবিক নিয়মে প্রতি মাসে প্রত্যেক পুলিশ অফিসে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভা হয়। সেখানে জেলার সব অপরাধের পর্যালোচনা করা হয়।

পর্যালোচনা করার ক্ষেত্রে ডাকাতি, দস্যুতা, খুন, দ্রুত বিচার আইনের মামলা, দাঙ্গা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা, অপহরণ, পুলিশ আক্রান্ত, সিঁধেল চুরি, চুরি, উদ্ধার সংক্রান্ত মামলা এবং অন্যান্য খাতের মামলা আলাদা আলাদা করে হিসাব করা হয়।

২০১৯ সালে মৌলভীবাজারের বর্তমান পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ যোগদানের পর এসব পর্যালোচনা করে দেখেন যে, অধিকাংশ মামলাই অন্যান্য খাতের মামলা। তিনি অন্যান্য খাতের মামলাগুলোকে বিভাজন করে উপস্থাপনের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে।

যেমন- জখম সংক্রান্ত, অগ্নিসংযোগ, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, সন্ত্রাস দমন আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, মানি লন্ডারিং আইন, মানবপাচার আইন, কট্রোল অ্যাক্ট, বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন, পাসপোর্ট আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, প্রতারণা, আত্মহত্যার প্ররোচনা, চাঁদাবাজি, জাল নোট ইত্যাদি।

তখন চমকপ্রদ কিছু তথ্য সামনে চলে আসে। দেখা যায় জেলার মোট মামলার ৩২.৭৮ শতাংশ মারামারি (জখম) সংক্রান্ত মামলা। আবার মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে মারামারি (জখম) মামলা হওয়ার অভিযোগও কম নয়।

ছকের মাধ্যমে উপস্থাপন করে মারামারি কমানো এবং মারামারি মামলা রুজু করার সময় এর সত্যতা যাচাই করার নির্দেশনা দেন এসপি। ফলে এক মাসের মধ্যেই জাদুকরী ফল আসা শুরু করে। এক বছরে কমে যায় ২৫৫টি মামলা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ জানান, আমাদের সঠিক উদ্যোগে এক বছরে ২৫৫টি মামলা কমে গেছে। এই ছক বর্তমানে সিলেট রেঞ্জের সব জেলার অপরাধ বিশ্লেষণে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে সিলেট রেঞ্জের সব জেলায় মারামারির মামলা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।

ছক পরিবর্তন করে মামলা কমানোর এই উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে সফল হওয়ায় বর্তমানে তা প্রস্তাব আকারে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায় শিগগিরই সারাদেশে এটি কার্যকর করা হবে। এতে হাজার হাজার মামলা কমে যাবে এবং লাখ লাখ মানুষ হয়রানি থেকে বেঁচে যাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রিপন দে/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।