করোনার ‘দ্বিতীয় ঢেউয়ের’ মধ্যেই কক্সবাজারে বাণিজ্য মেলা
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশংকার মধ্যেই কক্সবাজারে শুরু হয়েছে দেড়মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম সংলগ্ন পর্যটন গলফ মাঠে বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে পর্দা উঠছে এই মেলার। প্রথম ধাপে মেলা চলবে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত।
জেলা প্রশাসন থেকে এই যৌথভাবে মেলা আয়োজনের অনুমতি পেয়েছেন সাবেক পৌর চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার এবং একটি সাংবাদিক সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও কক্সবাজার চেম্বার।
আয়োজকরা বলছেন, করোনাকালের স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে এবার মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হচ্ছে না। আর মেলায় মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না। প্রবেশদ্বারে বসানো হবে ২টি জীবাণুমুক্ত করণ টানেল।
তবে এই মেলা আয়োজনের বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছে না সচেতন মহল। চলমান মহামারিতে এ মেলা বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরাও।
তাই কক্সবাজারে এই মেলার অনুমোদন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কক্সবাজারের কয়েকজন চিকিৎসক নেতা বলেন, শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে বিশ্বব্যাপী বাড়তে শুরু করেছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। অনেক দেশে ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে মৃত্যুর হারও। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আতংক বিরাজ করছে বাংলাদেশেও। এমন পরিস্থিতিতে কক্সবাজারে আয়োজন হচ্ছে শিল্প ও বাণিজ্য মেলার। এতে করে কক্সবাজারে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল বলেন, ‘শীতকাল শুরুর আগেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার কথা জানিয়ে সতর্ক হতে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আমরাও সেভাবে কাজ করছি। মেলার বিষয়টি জানার পর আমি জেলা প্রশাসককে মেলা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছি। এরপরেও যদি মেলা চলমান থাকে, আর যদি করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ে তার দায়ভার জেলা প্রশাসনকে নিতে হবে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে , মেলার আয়োজন প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রবেশপথে বসানো হয়েছে বিশালাকৃতির গেট। এবারের মেলায় থাকছে বিভিন্ন পণ্যের ১০৪টি স্টল। থাকছে দেশীয় প্রসিদ্ধ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৬টি প্যাভিলিয়ন। তার মধ্যে প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, সাধারণ প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার স্টল, সাধারণ স্টল, শিশুদের বিনোদনমূলক রাইডস, খাবারের দোকান নজরকাড়াভাবে সাজানো হয়েছে। নারীদের কাপড় ও কসমেটিকসের বাহারি সামগ্রী নিয়ে স্টল রয়েছে অনেক। বিনোদনের জন্য রয়েছে জাদু প্রদর্শনী, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন।
এসব নিয়ে চলছে জোর প্রচারণা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রতিবারের মতো এবারও প্রচুর লোকসমাগম হবে মেলায়। সৈকতের খোলামেলা এলাকার চেয়ে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বন্দি লোকজনের মাঝে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি। মেলা এমনই একটি আয়োজন। বাচ্চাদের মেলায় আনা হবে চরম বিপদ।
আমরা কক্সবাজারবাসী সংগঠনের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন জানান, ‘করোনা মোকাবেলায় সরকার নানাবিধ ব্যবস্থা নিয়েছে। এ অবস্থায় মেলার আয়োজন সব সফলতাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। তাই কক্সবাজারকে করোনা-মুক্ত করতে মেলা বন্ধ রাখা প্রয়োজন মনে করছি।’
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন সৈকতে হাজার হাজার লোকসমাগম হচ্ছে। সেই হিসেবে আমাদের করোনা সংক্রমণ কম। তাছাড়া লকডাউন না থাকায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয় মাথায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের শর্তে মেলার অনুমতি দেয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্যবিধি মানার পরেও যদি করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ে তখন মেলা বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
সায়ীদ আলমগির/এসএস/জেআইএম