আতঙ্কে পরিবার, এখনও আঁতকে ওঠেন একমাত্র সাক্ষী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ১০:৪৪ এএম, ১৩ মার্চ ২০২১

দলীয় কোন্দলের বলি মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিংগাইর সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভিপি ফারুক হোসেন মিরু হত্যা মামলায় পুলিশ তিন আসামিকে গ্রেফতার করলেও এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে মূল হোতারা। ঘটনার পর থেকে আসামিরা পালিয়ে বেড়ালেও অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় রয়েছেন। ১২ দিন পরও মূল হোতারা গ্রেফতার না হওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মিরুর পরিবার ও ঘটনার সাক্ষীরা।

পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার তিন আসামির দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকিদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।

এদিকে মিরুর হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই সিংগাইর উপজেলায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন সংগঠন।

সিংগাইর বাসস্ট্যান্ড থেকে কয়েক গজ দূরেই নিহত ছাত্রলীগ নেতা মিরুদের বাড়ি। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মিরুর মা ছেলের ছবি হাতে নিয়ে কাঁদছেন। তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন স্বজনরা।
বাড়িতে বসেই কথা হয় মিরুর বাবা-মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে। এখনও মূল আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় তাদের মাঝে উদ্বেগ আর আতঙ্ক বিরাজ করছে।

মিরুর বড় ভাই ও হত্যা মামলার বাদী হিরু মিয়া জানান, মিরুকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল পরিবারের। সবারই আদরের ছিল সে। কিন্তু ঘাতকরা তাকে বাঁচতে দিল না। ঘটনার ১২ দিন পরও মূল হোতারা ধরা না পড়ায় তারা সবাই আতঙ্কে আছেন।

তিনি বলেন, এখন বাড়ি থেকে বের হতেই ভয় লাগে। কারণ ঘাতকরা এখনও ধরা পড়েনি। যেকোনো সময় আরেকটি ঘটনা ঘটাতে পারে।

jagonews24

তিনি মামলার সকল আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বলেন, সকল আসামিরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

আতঙ্কে দিন কাটছে ঘটনার রাতে মিরুর সঙ্গে থাকা আসলাম খানেরও। একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে মিরু এবং তিনি দুটি মোটরসাইকেলে বাড়িতে ফিরছিলেন। উপজেলা পরিষদের সামনে পৌঁছালে দুটি সিএনজি দিয়ে তাদের গতিরোধ করা হয়। এরপর অস্ত্র নিয়ে ১০/১৫ জন এক যোগে সিএনজি থেকে বের হয়ে এলে মোটরসাইকেল রেখে দুজন দু’দিকে দৌড় দেন। আসলামের দিকে ধাওয়া করে দুই জন। বাকিরা মিরুর দিকে।

দৌড়ে প্রাণে বাঁচলেও সেই রাতের কথা মনে করে এখনও আঁতকে ওঠেন আসলাম। বলেন, রাতে ঘুমাতে পারিনা। চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় এই বুঝি সেই ঘটনা ঘটছে। ধাওয়া করছে আমি দৌড়ে পালাচ্ছি।

আসলাম জানান, মূল আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় তিনিও আতঙ্কে আছেন। ভয়ে বাড়ি থেকে বের হন না।

সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শহিদ জানান, ছাত্র নেতা মিরু সিংগাইরের রাজনীতিতে একটি সম্ভাবনায় ছেলে ছিল। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। যারা তার কলেজে ভিপি হওয়ার সময় বিরোধিতা করেছে তারাই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। যারা সরাসরি হত্যায় জড়িত তাদের গ্রেফতারের পাশাপাশি ঘাতকদের আশ্রয়দাতাদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

শহিদুর রহমান বলেন, ঘাতকরা পালিয়ে বেড়ালেও অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় রয়েছে। প্রশাসন ইচ্ছা করলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সকল আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেন বলে মনে করেন তিনি।

মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিংগাইর সার্কেল) মোহা. রেজাউল হক বলেন, দলীয় কোন্দল এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই মিরুকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার একদিন পরই সিএনজি চালকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। একই সাথে হত্যার কাজে ব্যবহৃত সিএনজি, ধারালো অস্ত্রসহ বিভিন্ন আলামতও উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেফতার তিন আসামির দুই জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। দ্রুতই সকল আসামিদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ১ মার্চ (সোমবার) মধ্যরাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের বাড়িতে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে মোটরসাইকেলে বাড়িতে ফিরছিলেন মিরু ও আসলাম খান। সিংগাইর উপজেলা পরিষদের সামনে সিএনজি দিয়ে তাদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে মিরুকে এলোপাতারি কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। দৌড়ে প্রাণে বাঁচেন আসলাম। মুমূর্ষু অবস্থায় মিরুকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরদিন মারা যান তিনি।

বি.এম খোরশেদ/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।