সরকারি গাছের আম পেড়ে বেচলেন আ.লীগ নেতা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নাটোর
প্রকাশিত: ০৫:২৫ পিএম, ৩১ মে ২০২১

অনুমোদন ছাড়াই নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের চাঁদপুর গোরস্থান এলাকায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের লাগানো অর্ধশতাধিক সরকারি গাছের আম বিক্রির অভিযোগ উঠেছে আব্দুর রহমান নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।

রোববার (৩০ মে) দুপুরে বাগানের সব আম পেড়ে তিনি বাজারে বিক্রি করে দেন। আব্দুর রহমান কাফুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পাম্প অপারেটর।

বিএমডিএ অফিস সূত্রে জানা যায়, পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ২০০৭-৮ অর্থবছরে নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস থেকে তকিয়া পর্যন্ত উভয় পাশে আমসহ অন্যান্য ফলদ গাছ রোপণ করে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। গত তিন বছর থেকে ওইসব গাছে ফল আসা শুরু করে।

মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এসব গাছের ফল খেয়ে পথচারীদের যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হতো, তেমনি বন্যপ্রাণীদের জন্য তৈরি হতো প্রাকৃতিক খাবার। প্রতিটি গাছের আম বিক্রি করা হয় ১৬ টাকায়। নাটোরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) এমন ঠিকাদার প্রীতির কারণে সে সময় সমালোচনার ঝড় ওঠে। সেই থেকে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে গাছগুলোর আম বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়। চলতি বছর আমগাছগুলো কোনো ঠিকাদারকে বরাদ্দ দেয়া হয়নি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নাটোর সদর উপজেলার কাফুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের নিযুক্ত পাম্প অপারেটর আব্দুর রহমান কোনো প্রকার টেন্ডার ছাড়াই রোববার দুপুর থেকে নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের দুই পাশে লাগানো গাছগুলো থেকে প্রকাশ্যে আম পাড়তে শুরু করেন। এ সময় স্থানীয়রা বাধা দিলে তিনি নাটোরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ‘জাল’ কার্যাদেশ দেখান।

এলাকার তরুণরা কার্যাদেশটি জাল বলে দাবি করে আম পাড়ায় বাধা দিতে গেলে তিনি পুলিশ দিয়ে শায়েস্তা করার হুমকি দিয়ে প্রকাশ্যে আম নিয়ে যান। ৫০টির মতো গাছের আম নামিয়ে বাজারে বিক্রি করে দেন। কাউকে টেন্ডারে না দেয়ার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়।

স্থানীয় রহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে লাগানো আমগাছগুলো গত দুই বছর থেকে আম ধরতে শুরু করেছে। আশপাশের লোকজন এসব গাছে ছায়ার নিচে বসে। আবার অনেক সময় পাকা আম গাছ থেকে লোকজন পেড়ে খায়। এছাড়া পশু-পাখিরাও গাছের আমগুলো খায়। টেন্ডার ছাড়াই আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান আম লুট করে বিক্রি করে দেয়ায় হতাশ হয়েছি।’

জমিলা বেগম নামে একজন গৃহবধূ বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। আম কিনতে পারি না। আমাদের বাড়ির সামনের সরকারি গাছের আমই খেতাম। আব্দুর রহমান জোর করে পাড়ায় এ বছর আর আম খাওয়া হবে না।’

অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমি টেন্ডারে আমগাছগুলো পেয়েছি। আমার কাছে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের আম নামানোর কার্যাদেশ রয়েছে।’

এ বিষয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মাদ আহসানুল করিম বলেন, ‘জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য এবার আম বিক্রির টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। সেহেতু কার্যাদেশ দেয়ার প্রশ্নই আসে না। অল্প সামান্য আম, এগুলো পথচারী এবং পশু-পাখিরাই খাবে। আম গাছগুলো থেকে আম পাড়তে আব্দুর রহমানকে নিষেধ করা হয়েছে। নিষেধ করার কারণে তিনি অফিস স্টাফদের সঙ্গে বাজে ব্যবহারও করেছেন।’

রেজাউল করিম রেজা/এসজে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।