লকডাউন শেষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের টাকা ফেরত
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে ১১ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত বিক্রয়কৃত অগ্রিম টিকিটের টাকা ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও তাতে ব্যর্থ হয় রেল কর্তৃপক্ষ। এই চলমান লকডাউনের ভেতরও যাত্রীরা টিকিট ফেরত দিতে এসে স্টেশনের কাউন্টার থেকে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। অপরদিকে প্রতিদিনই যাত্রীদের নানা প্রশ্ন ও বাক্যবাণে পড়তে হচ্ছে দায়িত্বে থাকা স্টেশনের বুকিং সহকারী ও তথ্য সরবরাহকারীদের।
রাজশাহী স্টেশনে অনুসন্ধান কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সোহেল রানা ও মোছা. মুক্তি খাতুন জানান, প্রতিদিন অনেক মানুষ এই অনুসন্ধান কেন্দ্রে এসে টিকিট ফেরতের বিষয়ে জানতে চায়। আবার অনেকেই অনুসন্ধান কেন্দ্রের হটলাইন নম্বরে ফোন করে অনেক আজে-বাজেভাবে গালমন্দ করেন। এরপরও আমরা তাদের ধৈর্যের সঙ্গে তথ্য দিই। ঊর্ধ্বতনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী তাদের বলা হয়েছে- লকডাউন খুললেই ক্রয়কৃত টিকিটের টাকা ফেরত দেয়া হবে। সবাই তার প্রাপ্য টাকা ফেরত পাবেন।’
এ বিষয়ে স্টেশনে দায়িত্বরত বুকিং সহকারী মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘প্রতিদিনই প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন আসেন টাকা ফেরত নেয়ার জন্য। কিন্তু টাকা না থাকায় তাদের লকডাউনের পর আসতে বলা হয়েছে। লকডাউন খুললেই টিকিটের টাকা ফেরত পাবেন বলে জানানো হচ্ছে।’
এ বিষয়ে রাজশাহী স্টেশন ম্যানেজার মো. আব্দুল করিম বলেন, ‘১০ জুন প্রায় ছয় লাখ টাকা ক্যাশ হাতে থাকায় তা ১১ জুন ভোর থেকে যাত্রীদের দেয়া হয়েছিল। তিতুমীর ট্রেনের সব যাত্রীকেই টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বনলতা, পদ্ম, টুঙ্গিপাড়া, বরেন্দ্র ও ঢালারচর এক্সপ্রেসের কিছু যাত্রীদের টাকাও ফেরত দেয়া হয়। তবে টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ যাত্রীই বাকি থেকে যান। এখনো প্রায় ৩০ লাখ টাকার মতো ফেরত দিতে হবে যাত্রীদের।’
কথা হয় স্টেশনে টিকিটের টাকা ফেরত নিতে আসা যাত্রী জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, এই লকডাউনেও স্টেশনে এসেছিলাম টিকিটের টাকা ফেরত নিতে। কিন্তু তা পেলাম না। স্টেশন থেকে বলা হচ্ছে টাকা নেই, লকডাউনের পর থেকে টাকা ফেরত দেয়া হবে। তাই বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।’
ব্যর্থতার কারণ জানতে চাইলে বুধবার (১৬ জুন) সকালে রেলওয়ের প্রধান বুকিং সহকারী মো. আব্দুল মোমিন বলেন, ‘১৩ জুন যাত্রীদের অগ্রিম টিকিটের টাকা ফেরত দেয়ার কথা ছিল। সেই লক্ষ্যে রাজশাহী রেলওয়ের অর্থবিভাগে একটি আবেদনও করা হয়েছিল। এতে পশ্চিমাঞ্চলের রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম), চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম), ডিভিশনাল কমার্শিয়াল অফিসারসহ (ডিসিও) স্টেশন ম্যানেজার সবাই তাতে সুপারিশ করেন। কিন্তু কিছু আইনগত জটিলতা ও অর্থ বিভাগের বাধ্যবাধকতায় সেই আবেদন নাকচ হয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যদিকে, শুক্রবার ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণেও আমরা টাকা তুলে ফেরত দিতে পারিনি। তাই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক টাকাও ফেরত দিতে ব্যর্থ হই।’
যাত্রীরা টিকিটের টাকা আদৌ ফেরত পাবেন কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অর্থবিভাগের সিদ্ধান্ত নাকচ হলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই। রেল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- লকডাউন খুললেই ট্রেন চালু হবে। তখন স্টেশনে টিকিটের বিক্রিত অর্থ থেকেই যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দেয়া হবে। এই কার্যক্রম লকডাউন খোলার একমাস পর্যন্ত চলবে।’
ফয়সাল আহমেদ/এসজে/এএসএম