সবুজ নড়াইল গড়তে তিন বৃক্ষপ্রেমীর অনন্য দৃষ্টান্ত

নড়াইলের বৃক্ষপ্রেমী তিন ব্যক্তি। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গাছ লাগান নড়াইলের বিভিন্ন শহরে। পরিবশে রক্ষায় তাদের এই কাজ এলাকায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। নড়াইল শহরে বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব যেন নিজ হাতে তুলে নিয়েছেন তারা। গাছ লাগিয়েই থেমে যান না তারা, গাছগুলোকে রক্ষা করতে খাঁচা দিয়ে ঘিরে দেন এবং পলিথিন দিয়ে গাছের গোড়া মুড়ে দেন। যতদিন প্রয়োজন নিজেরাই গাছের গোড়ায় পানি দেন। কখনও সেই গাছ মরে গেলে পুনরায় নতুন একটি গাছ রোপনের ব্যবস্থা করেন। আবার পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো বিদেশি বা দ্রুত বর্ধনশীল গাছ রোপন করেন না তারা।
তিন বৃক্ষপ্রেমী হলেন- শহরের মহিষখোলা এলাকার প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার আবুল কাশেম তারিক বিল্লাহর ছেলে নড়াইল পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর খন্দকার আল মুনসুর বিল্লাহ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রয়াত মুন্সী আব্দুল মান্নানের ছেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুন্সী কামরুজ্জমান বুলবুল এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক কার্যালয়, নড়াইলের অ্যাসিসট্যান্ট রিজিওনাল ডিরেক্টর (সাবেক) নজরুল ইসলাম শেখ।
শহরের পৌর কবরস্থান এলাকা, সরকারি বালক ও বালিকা বিদ্যালয়ের পার্শ্বে, জেলা শিল্পকলা একাডেমী ও বালক বিদ্যালয় মাঠের পার্শ্বে, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে, নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের মুসলিম হোস্টেলের পার্শ্বে গেলেই চোখে পড়বে তাদের লাগানো গাছের সারি। বিভিন্ন গাছের মধ্যে রয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল, কদবেল, কাঠ বাদাম, চালতে, আমড়া, জামরুল, আমলকি, পলাশ, কদম, বকুল। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে তারা নীরবে নিজেদের অর্থ এবং শ্রমে পরিবেশবান্ধব এবং সেবামূলক কাজটি করে যাচ্ছেন।
প্রচারবিমুখ দুই বন্ধু খন্দকার আল মুনসুর বিল্লাহ এবং মুন্সী কামরুজ্জমান বুলবুল বলেন, ‘ক্লান্ত পথিক দেশি গাছের ছায়ায় একটু আশ্রয় নেবে, গাছে গাছে পাখিরা বসবে, ফল খাবে, সাধারণ মানুষও ফল পেড়ে খাবে, এ ধরনের স্বপ্ন নিয়ে সড়কের ক্ষতি না করে সরকারি জায়গার ওপর ১৩ বছর আগে প্রথম আমরা দু’জন অধিকাংশই ফলজ গাছ লাগানো শুরু করি। পরে নজরুল সাহেব যুক্ত হয়ে সাতবছর একসঙ্গে কাজ করেছি। অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথমদিকে লাগানো অধিকাংশ গাছই বাঁচতো না। গাছের পেছনে শ্রম এবং সময় দিতে হয়। এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার গাছ লাগিয়েছি, বেঁচেছে তিন শতাধিক। প্রায় আড়াইশ গাছে ফল ও ফুল ধরেছে। এ কাজে স্থানীয় জনগণ এগিয়ে আসলে শহরের বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে সবুজ বনায়ন করা সম্ভব।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নড়াইল জেলা শাখার আহ্বায়ক খন্দকার শওকত বলেন, ‘দেশের জনসংখ্যার ভারসাম্যের জন্য যে বনায়ন প্রয়োজন সে তুলনায় হচ্ছে না। তাদের অর্থ এবং নিঃশ্বার্থ শ্রমে সমাজ উপকৃত এবং তাদের দেখে দেশের মানুষও বৃক্ষরোপনে উৎসাহী হচ্ছে। ফলজ গাছের ফল একদিকে যেমন মানুষ খাচ্ছে আবার পাখিদেরও খাদ্যের চাহিদা মিটছে। পাখিদের খাদ্যের অভাবে দেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।’ নিঃস্বার্থ এই বৃক্ষপ্রেমীদের তিনি অভিনন্দন জানান।
নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘নড়াইল শহরে যারা এসব গাছ রোপন করছেন তাদের ব্যাপারে জানা নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে তাদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া যেতে পারে। তাদের গাছ সংরক্ষণের ব্যাপারে প্রশাসন পদক্ষেপ নেবে। এ ছাড়া বনবিভাগ থেকে যদি তারা ফলজ ও বনজ গাছের চারা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন তাহলে অবশ্যই তাদের দেয়া হবে।
হাফিজুল নিলু/ইএ/এমকেএইচ