বাড়িতে খাবার তৈরি করেই লাখ টাকা আয়

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জামালপুর
প্রকাশিত: ০৫:০৮ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০২১

করোনা সংক্রমণ আর বারবার লকডাউনে প্রায় বন্ধের উপক্রম জামালপুরের রেস্তোরাঁগুলো। আবার খোলা থাকলেও করোনার ভয়ে অনেকেই রেস্তোরাঁয় বসে খেতে চান না। তাই দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হোমমেড খাবারের ব্যবসা। গুণগত মান বজায় রেখে স্বল্পমূল্যে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রাহকদের ঘরে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে চাহিদামতো খাবার। আর ঘরে বসেই রেস্তোরাঁর খাবারের স্বাদ পেয়ে ভোজন রসিকরাও ঝুঁকছেন হোমমেড খাবারের দিকে।

ইডেন কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বিনতে কবির। করোনার কারণে কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঢাকা থেকে জামালপুরে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর ফেসবুকে হঠাৎই একদিন চোখ পড়ে ই-কমার্স ভিত্তিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)’ গ্রুপে। যুক্ত হন সেখানে। গ্রুপের বিভিন্ন পোস্ট দেখে উৎসাহিত হয়ে এক বছর আগে খুলে ফেলেন ‘রসনা বিলাস’ নামের হোমমেড খাবারের ফেসবুক পেজ।

jagonews24

শুরুর দিকে শুধু পরিচিতরাই খাবারের অর্ডার করলেও বর্তমানে তার ব্যবসার পরিচিতি জামালপুর পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য জেলাতেও। এই এক বছরে ব্যবসা থেকে তিনি উপার্জন করেছেন প্রায় দেড় লাখ টাকা। শুধু আমের মৌসুমে আচারই বিক্রি করেছেন ৩০ হাজার টাকার।

সুমাইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন অনেকেই রেস্তোরাঁ দিতে উৎসাহিত করেন। কিন্তু আমি হোমমেড খাবারের এই অনলাইন ব্যবসাকেই আরও বৃহৎ আকারে পরিচালনা করতে চাই।’

মিলি’স কিচেনের স্বত্বাধিকারী তানজিদা ইয়াসমিন মিলির শুরুটাও প্রায় একই রকম। মুখরোচক খাবার তৈরি করতেন নিজের সন্তান আর স্বজনদের জন্য। পরে তাদের উৎসাহেই শুরু করেন হোমমেড খাবারের ব্যবসা। এখন স্থানীয় গ্রাহক তো আছেই, একই সঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানি এবং এনজিও অফিসেও খাবার সরবরাহ করছেন তিনি।

jagonews24

শুধু সুমাইয়া বা মিলি নয়, ‘ইয়াম্মি কেক কর্নারে’র শানু আলম, ‘প্রিয় খাবারে’র মাহফুজুন নাহার, ‘হোমমেড ভর্তা’র বৃণতি ফেরদৌসী, ‘ফিউশনে’র সাবরিনা আক্তার, ‘টি এম ফুডিস’র সাদিকা সুমাইয়া, ‘ক্রিমি ক্রিয়েশন বাই বর্ণ’ এর মাশিয়াত বর্ণ’র মতো জামালপুরের অন্তত ২০ জন নারী উদ্যোক্তা হোমমেড খাবারের অনলাইন পেজ পরিচালনা করছেন। এই উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগই দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। আছেন গৃহিণীরাও।

এই পেজগুলোর জনপ্রিয় খাবারগুলো হলো-চটপটি, ফুচকা, চাউমিন, পাস্তা, পিজ্জা, বার্গার, চিকেন ফ্রাই, স্যান্ডউইচ, খিচুড়ি, বিরানি, কাচ্চি, তেহারি, বাংলা খাবার, বিভিন্ন রকমের কেক, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, মাংসের পিঠাসহ বৈচিত্র্যময় পিঠা, আমসত্ত্ব, মোরব্বা, ঝাল-মিষ্টি বিভিন্ন প্রকার আচার।

jagonews24

এসব পেজ থেকে নিয়মিত খাবার নেয়া কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ। তারা বলেন, করোনা সংক্রমণের এই সময়ে রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ তাই অনলাইনেই হোমমেড খাবারের অর্ডার দিচ্ছেন। একদিকে এসব খাবার খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি দামেও সাশ্রয়ী। আবার অর্ডার দেয়ার পর তৈরি করা হয় বলে খাবারও থাকে টাটকা।

নারী উন্নয়ন কর্মী ও তরঙ্গ মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শামীমা খান বলেন, করোনা সংক্রমণের এই সময়ে অন্য ব্যবসাগুলো যখন ক্ষতিগ্রস্ত, তখন জামালপুরের মেয়েরা পড়াশোনা পাশাপাশি রন্ধন শিল্পকে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়েছেন। সহযোগিতা পেলে তারা আরও সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন।

এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।