ভোলায় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ডিমওয়ালা ইলিশ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ভোলা
প্রকাশিত: ১১:২৭ এএম, ২৯ অক্টোবর ২০২১

ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষায় সরকার ঘোষিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। সোমবার (২৫ অক্টোবর) দিনগত মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরপরই ইলিশ ধরতে নামেন জেলেরা। কিন্তু এখনও ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা ইলিশ। এর মধ্যে বেশির ভাগই বড় সাইজের ডিমওয়ালা মা ইলিশ বলে জানিয়েছেন জেলেরা।

জেলেরা জানান, তাদের জালে ধরা পড়া ডিমওয়ালা মা ইলিশগুলো তিন থেকে চারদিনের মধ্যে ডিম ছেড়ে দিতো। কিন্তু ডিম ছাড়ার আগেই জেলেদের জালে ধরা পড়েছে ওইসব মা ইলিশ। প্রতিদিন তাদের জালে যে ইলিশ ধরা পড়ছে তার ৮০ থেকে ৯০ ভাগই ডিমওয়ালা ইলিশ। ইলিশ রক্ষার নিষেধাজ্ঞা শেষে আর কোনো বছরই এত পরিমাণ ডিমওয়ালা ইলিশ তাদের জালে ধরা পড়েনি। তাই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ বলে মনে করছেন তারা।

jagonews24

ক্ষোভ প্রকাশ করে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার জেলে এবং মৎস্য আড়তদাররা বলেন, প্রতিবছর মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ভোলা ও তেঁতুলিয়ার কোনো মৎস্য আড়তদার, ব্যবসায়ী বা জেলেদের মতামত নেওয়া হয় না। এবছরও একইভাবে মতামত না নিয়ে নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণ করায় এমনটা হয়েছে।

অন্যদিকে ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশের মৎস্যবিজ্ঞানীর দাবি, এ বছর ১৭ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে মা ইলিশের ডিম ছাড়ার পরিমাণ অনেক বেশি হতো।

jagonews24

ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি মৎস্য ঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেঘনা নদী থেকে নৌকা ও ট্রলার নিয়ে ইলিশ ধরে ঘাটে ফিরে আসছেন জেলেরা। পরে সে ইলিশগুলো ঘাটের আড়তদারের কাছে বিক্রি করছেন। কিন্তু জেলেদের নিয়ে আসা ইলিশের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ ভাগই ডিমওয়ালা মা ইলিশ। আবার অনেক মা ইলিশের পেট থেকে ডিম পড়ে যাচ্ছে। জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন, ওই মা ইলিশ তিন থেকে চারদিনের মধ্যেই ডিম ছেড়ে দিতো। এমন দৃশ্য দেখে ভবিষ্যতে নদীতে ইলিশ সংকট হওয়া নিয়ে চিন্তিত জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও তুলাতুলি মেঘনা নদীর জেলে মো. লোকমান হোসেন মাঝি বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত তুলাতুলি মেঘনা নদীতে জাল ফেলে ১১টি বড় সাইজের ইলিশ ও ৮টি ঝাকটা পেয়েছি। ১১টির মধ্যে মাত্র ৩টি ইলিশ ডিম ছেড়েছে। বাকি ইলিশগুলোর পেট ডিমে ভরা।

jagonews24

তুলাতুলি গ্রামের বাসিন্দা ও মেঘনা নদীর জেলে মো. হানিফ মাঝি বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন সাইজের ৩০টি ইলিশ পেয়েছি। এর মধ্যে মাত্র চারটি ইলিশ ডিম ছেড়েছে। বাকি সবগুলোর পেটে ডিম ছিল। এছাড়াও দুইটি ইলিশ জাল থেকে হাতে ধরে দেখি, ডিম ঝরে পড়ছে।

জেলে মো. আবুল কাশেম বলেন, ৩৫ বছর ধরে মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে সংসার চালাই। প্রতিবছরই নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে গিয়ে অনেক ডিম ছেড়ে দেওয়া (পাইর) ইলিশ পাই। কিন্তু এ বছর তিন থেকে চারদিনে মাত্র পাঁচটির মতো পাইর ইলিশ পেয়েছি।

jagonews24

জেলে মো. আমির হোসেন মাঝি বলেন, সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা প্রতিবছর সফল হলেও এ বছর নদীতে গিয়ে ডিমওয়ালা মা ইলিশ অনেক বেশি পাচ্ছি। আর পাইর ইলিশ পাচ্ছি খুব কম। আমরা জেলেরা মনে করি, এ বছরের ২২ দিনের অভিযান ব্যর্থ হয়েছে।

তুলাতুলি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী মো. মঞ্জু ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি বাজারে যে ইলিশ বিক্রি হয় বা দেশের বাইরে যে ইলিশ রপ্তানি হয় তার বেশি ভাগই ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী থেকে শিকার করা। মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণে ভোলার কোনো মৎস্য আড়তদার, ব্যবসায়ী বা জেলেদের মতামত নেওয়া হয় না। সঠিক সময় নির্ধারণ না করার কারণে এ বছর ইলিশের ভড়া মৌসুমে নদীতে ইলিশের সংকট ছিল। একই কারণে এ বছর সরকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পরেও জেলেরা নদীতে গিয়ে প্রচুর মা ইলিশ পাচ্ছেন। যদি মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেদের কাছ থেকে নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণে মতামত নিতো তাহলে এ বছর এমন অবস্থা হতো না।

jagonews24

ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশের মৎস্যবিজ্ঞানী ড. মো. জলিলুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর মেঘনা নদীতে সর্ব্বোচ ২০ ভাগ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম। তবে যদি ১৬ বা ১৭ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা নির্ধারণ করা হতো তাহলে ইলিশের ডিম ছাড়ার পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেতো।

তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মেঘনা নদীতে এ বছর মা ইলিশ কি পরিমাণ ডিম ছেড়েছে তার গবেষণা এখনও চলছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমরা চূড়ান্তভাবে পরিমাণ বলতে পারবো।

জুয়েল সাহা বিকাশ/ইউএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।