বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিঘর হবে শহীদ আব্দুল কাদির স্মৃতিসৌধ
মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস আগামী প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে প্রতিটি গ্রামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত।
শনিবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের মোস্তফাপুর গ্রামে চিকলী নদীর ধারে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বুদ্ধিজীবী লে. কর্নেল মোহাম্মদ আব্দুল কাদিরের স্মরণে তার জন্মভিটায় নির্মিত স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। শহীদ আব্দুল কাদির ও স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষায় স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে।
এসময় সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, আমাদের অস্তিত্ব, বিশ্বাস এবং আমাদের সত্ত্বা মুুক্তিযুদ্ধের যে ইতিহাস তা বিকৃত করা থেকে রক্ষা করতে হলে প্রতিটি গ্রামে মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে চর্চাকেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে হবে। স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরেও প্রত্যন্ত একটি গ্রামে যে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হলো তা ভবিষ্যৎ প্রজম্মের কাছে বাতিঘর হিসেবে থেকে যাবে। এটি হবে আগামী প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চর্চাকেন্দ্র।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি গ্রামে প্রতিটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যদি এমন স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হতো তাহলে কেউ কোনোদিন বাংলাদেশের ইতিহাসকে পাল্টাতে পারতো না।’
এসময় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বুদ্ধিজীবী লে. কর্নেল মোহাম্মদ আব্দুল কাদিরের স্মরণে যারা স্মৃতিসৌধ নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা জানান আরমা দত্ত।
আব্দুল কাদিরের ছেলে এবং স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সাংবাদিক নাদীম কাদির বলেন, বাবা মারা যাওয়ার প্রায় ৫০ বছর পর ২০১৮ সালে আমি গ্রামে ফিরে আসি। এখানে এসে বাবার কোনো স্মৃতিচিহ্ন না পেয়ে কষ্ট পাই। তাই বাবাসহ এই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগ নিই।
এর আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং ফিতা কেটে স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের উত্তরসূরি ‘রক্তধারা’ ৭১ নামের একটি সংগঠন।

‘রক্তধারা’ ৭১ এর সভাপতি সাংবাদিক নাদীম কাদিরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আলোচনা অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ‘রক্তধারা’ ৭১ এর উপদেষ্টা, শহীদ পরিবারের সন্তান ও কুমিল্লা জেলার সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক এবং মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) বায়েজিদ সারোয়ার।
শহীদ লে. কর্নেল মোহাম্মদ আব্দুল কাদির দামোদরপুর ইউনিয়নের মোস্তফাপুর গ্রামের আবুল হোসেন মিয়ার ছেলে। তিনি ১৯২৯ সালের ২ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৪৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন আব্দুল কাদির। তিনি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ৭০ নম্বর সরকারি বাড়িতে পরিবারসহ বসবাস করতেন। পাকিস্তানি সেনারা জানতে পেরে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বাসা থেকে তাকে ধরে নিয়ে শহীদ করেন। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন কর্নেল কাদির।
স্বাধীনতার ৩৬ বছর পর ২০০৭ সালে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে বাবার কবর খুঁজে পান আব্দুল কাদিরের ছেলে সাংবাদিক নাদীম কাদির। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১১ সালে তার দেহাবশেষ নাটোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পুনরায় সমাহিত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে শহীদ লে. কর্নেল মুহাম্মদ আব্দুল কাদিরের নামে নাটোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসের নামকরণ করা হয়।
জিতু কবীর/এসআর/জেআইএম