টিকার জন্য মাইকিং করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: ০৯:৩২ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০২২
টিকা দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে টিকা গ্রহণের রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১১০ টাকা করে আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (১২ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের বেলুয়া জনতা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাইকিং করে টাকা আদায় করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১১ জানুয়ারি থেকে উপজেলার প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়। এতে বুধবার বেলুয়া জনতা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৯০ জন শিক্ষার্থীর টিকা নেওয়ার নির্ধারিত তারিখ ছিল। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ সকাল থেকেই মাইকিং করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১১০ টাকা করে নিয়ে টিকা কেন্দ্রে যেতে বলেন। তাদের টিকা কেন্দ্র ছিল গোপালপুর পৌরসভার রাধারাণী গার্লস স্কুল।

মাদারজানি গ্রামের শিক্ষার্থী স্বপন হাসান হৃদয় বলেন, ‘বেলুয়া, ভোলারপাড়া, কুমুল্লী, মাদারজানি ও জামতৈল গ্রামের বিভিন্ন সড়কে মাইকিংয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১১০ টাকা করে টিকা কেন্দ্রে যেতে বলা হয়। করোনা টিকার রেজিস্ট্রেশনের জন্য ওই টাকা লাগবে বলে জানানো হয়।‘

শিক্ষার্থী অনিকা জানায়, গত এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় করোনার টিকার কথা বলে ১০০ টাকা করে আদায় করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এবার মাইকে প্রচার করে টিকার জন্য আরও ১১০ টাকা নিয়ে কেন্দ্রে যেতে বলা হয়। টাকা নিয়ে রাধারাণী গার্লস স্কুলে রেজিস্ট্রেশনের জন্য টাকাসহ লাইনে দাঁড়ানোর পর শিক্ষকরা টাকা নিতে শুরু করেন। এ সময় সংবাদকর্মীরা হাজির হলে শিক্ষকরা টাকা নেওয়া বন্ধ করেন।

বিদ্যালয়ের ছাত্রী শান্তা, শিখা, আবিদা, আসিফ ও ইমরান জানায়, স্কুল কর্তৃপক্ষ অনেকের কাছ থেকে করোনার টিকার রেজিস্ট্রেশনের নামে ১১০ টাকা করে আদায় করেছেন।

কুমুল্লী উত্তরপাড়া গ্রামের মাইক দিয়ে প্রচারকারী ইজিবাইক চালক আব্দুর রহিম বলেন, স্কুলের দপ্তরী রাসেল তার গাড়িভাড়া করে আশপাশের পাঁচ গ্রামে টানা দুই ঘণ্টা করোনার টিকার রেজিস্ট্রেশনের জন্য ১১০ টাকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে হাজির হতে বলেন।

jagonews24

ঘটনা আঁচ করতে পেরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম মিয়া দুপুর ১২টার দিকে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন, ‘আমার পিয়ন মাইকিংয়ের সময় যে টাকার কথা প্রচার করেছে তা ভুলবশত। শিক্ষার্থীর নিজের যাতায়াত খরচের জন্য সেই টাকার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি কেউ ভুল বুঝে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’

তবে দপ্তরি রাসেল বলেন, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশেই আমি মাইকিং করেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, স্কুলের দপ্তরি রাসেল মাইকিং করে টাকা চেয়েছেন। আমি বিষয়টি জানতাম না। ওই দপ্তরিকে প্রয়োজনে সাসপেন্ড করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলীম আল রাজী জাগো নিউজকে বলেন, মঙ্গলবার থেকে স্কুলের প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আজ ২ হাজার ১৩০ জনকে টিকা দেওয়া হয়। টিকা আনা নেওয়ার খরচ বহন করছে স্থানীয় প্রশাসন। সুতরাং টিকা দেওয়ার অজুহাতে কেউ টাকা আদায় করতে পারবে না।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. নাজনীন সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, টিকা রেজিস্ট্রেশনের নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ পেয়ে আমি প্রধান শিক্ষককে কড়া ভাষায় সতর্ক করেছি।

এ বিষয়ে গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. পারভেজ মল্লিক জাগো নিউজকে বলেন, এ ব্যাপারে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরিফ উর রহমান টগর/এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।