নির্বাচন স্থগিত করায় পঞ্চগড়ে পরিবহন শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেছেন শ্রমিকরা। শুক্রবার রাত ১০টার পর থেকে সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ করতে থাকনে শ্রমিকরা।
অবরোধের কারণে শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দূরপাল্লার কোনো বাস, মিনিবাস জেলা ছেড়ে যেতে পারেনি। দিনভর জেলার বাইরে থেকেও কোন পরিবহন প্রবেশ করতে পারেনি। এতে স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী, যাত্রী ও ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শনিবার শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ চলছিল।
পুলিশ ও উভয় শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড়ের সব ধরনের পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে ১৯৭৯ সালে গঠিত ‘পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন’ দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। ২০০০ সালে শ্রমিকদের একটি অংশ পঞ্চগড় ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন নামে আরেকটি শ্রমিক সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত হয়ে কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায় পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে শ্রমিকদের আরেকটি অংশ পঞ্চগড় বাস, মিনিবাস ও কোচ শ্রমিক ইউনিয়ন নামে আরেকটি রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বাস টার্মিনালে তাদেরও কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে।
এ নিয়ে ২০১২ সালে পঞ্চগড় ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ‘পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নকে’ অবৈধ দাবি করে শ্রম আদালতে একটি মামলা করেন। ২০১৪ সালে ‘পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের’ তৎকালীন সভাপতি মরহুম রেনু মিয়া ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নকে অবৈধ দাবি করে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন।
এ নিয়ে উভয় শ্রমিক সংগঠনের একপক্ষ আরেক পক্ষকে অবৈধ দাবি করে দীর্ঘদিন ধরে শ্রম আদালত এবং উচ্চ আদালতে মামলা ও রিট পিটিশন দাখিলসহ আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে আসছিল। এরই মধ্যে গত ২৯ জানুয়ারি পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রীবার্ষিক নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয় এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু ২৯ জানুয়ারি তফসিল ঘোষণার পর ৩০ জানুয়ারি পঞ্চগড় ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. সাবিরুল ইসলামের রিভিউ আবেদনের পর উচ্চ আদালত ১৫ দিনের মধ্যে ‘পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নকে’ গঠনতন্ত্র সংশোধন করার আদেশ দেন। কিন্তু সংগঠনটি গঠনতন্ত্র সংশোধন না করে তাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছিল। এরপর গত ২২ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. সাবিরুল ইসলাম আবারও উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবেদন করেন। ওই দিনই উচ্চ আদালতের এক আদেশে নির্বাচনী তফসিল স্থগিত করা হয়।

জেলা শহর থেকে দিনাজপুরগামী যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের কী হয়েছে জানি না। আমার জরুরি কাজ থাকায় দিনাজপুর যেতে হবে। কিন্তু শ্রমিকরা আমার মতো হাজার হাজার যাত্রীকে অবরোধ করে রেখেছেন। এটা কে দেখবেন। আকস্মিক সড়ক অবরোধ মানেই জনদুর্ভোগ। এ নিয়ে প্রশাসনের আরও সতর্ক ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন।
পঞ্চগড় ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল খালেক বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত হয়ে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। বাস, মিনিবাসেরও রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। কিন্তু আদালতের আদেশ না মেনে ‘পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের নির্বাচন করছিল। এর বিপরীতে আমরা উচ্চ আদালতে আবেদন করলে আদালত নির্বাচনী তফসিল স্থগিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে গভীরভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। নির্বাচনের আগের দিন নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার আমাদের সঙ্গে দ্বিমুখী আচরণ করছেন। আমরা এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। নির্বাচন না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
পঞ্চগড় জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনার ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট জাগো নিউজকে বলেন, আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের আদেশের কপি পাওয়ার পর নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কিছুই করার সুযোগ নেই।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসূফ আলী জাগো নিউজকে বলেন, উচ্চ আদালতের এক আদেশে শ্রমিকদের নির্বাচনী তফসিল স্থগিত করা হলে শুক্রবার রাত থেকে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। তারা বিভিন্ন সড়কে অবরোধ সৃষ্টির চেষ্টা করেন। তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। আশা করি শিগগির পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
সফিকুল আলম/এসজে/জেআইএম