পুড়ে যাওয়া ছাইয়ের স্তূপে বই-খাতা খুঁজছে শিশু মরিয়ম
রাতে পড়াশোনা করে বইগুলো গুছিয়ে রেখেছিল মরিয়ম খাতুন। সকালে উঠে সেই বইগুলোতে চোখ বুলানোর কথা ছিল। কিন্তু রাতে আগুন আগুন চিৎকারে ঘুম ভাঙে তার। দ্রুত মায়ের হাত ধরে ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে ঘর থেকে বের হতে হয়। চোখের সামনে পুড়ে যায় সবকিছু।
বুধবার (১৬ মার্চ) দিবাগত রাত ২টার দিকে নাটোর সদর উপজেলার হুগোলবাড়িয়া রেলগেট এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে তিনটি ঘর পুড়ে যায়। সেখানে মরিয়ম খাতুনদের ঘরও ছিল।
আগুন নিভে গেলে বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) সকাল ১০টায় মরিয়ম খাতুন পোড়া স্তূপে বই খুঁজছিল। তার মা শাহানাজ বেগম তাকে সাহায্য করছিলেন। মরিয়ম শহরের তেবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।
শিশু মরিয়ম জানায়, আগের দিন এশার পর অনেকক্ষণ পড়াশোনা করেছে। ঘুমানোর আগে বইগুলোও গুছিয়ে রেখেছিল। আজ সকালে প্রাইভেটে যাওয়ার আগে রাতের পড়া চোখ বোলানোর কথা থাকলেও আগুন সেটি হতে দিলো না।
শাহানাজ বেগম জানান, তারা ৯ বছর ধরে এখানে থাকছেন। তার স্বামী আন্তঃজেলা ট্রাকে হেলপার হিসেবে কাজ করেন। দুদিন আগে তিনি ট্রাক নিয়ে সিলেট গেছেন। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অন্যের জমিতে টিনের চালা ও টিনের বেড়া দিয়ে তিনটি ঘর তুলেছিলেন। থাকতেন দুই মেয়ে মরিয়ম (১৩), পলি (৪) ও শাশুড়ি রাবেয়া বেওয়াকে (৭০) নিয়ে। বাসা পুড়ে ছাই হওয়ায় এখন তাদের আর মাথা গোঁজার ঠাঁই রইলো না। এখন পর্যন্ত কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি।
মরিয়মদের পাশের ঘরে থাকতেন তার দাদি রাবেয়া বেওয়া। ৯ বছর ধরে ছোট ছেলের সঙ্গেই থাকেন তিনি। তাদের তিনটি কক্ষ একেবারে পুড়ে গেছে। ঘরে থাকা পুরো মাসের জন্য কেনা ১ মণ চাল, ১০ কেজি আটাও পুড়ে গেছে। রাত থেকে আগুনের সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো না খেয়ে আছেন। কারণ, ঘরের সঙ্গে জমানো টাকা-পয়সাও পুড়ে গেছে।
মরিয়মের ফুপু লাইলী বেগম বলেন, পানি খাওয়ার জন্য পানির পাত্রটাও নেই। এক পোশাকে বেরিয়ে এসেছে। খোলা আকাশের নিচে আছে। কোথায় যাবে, কোথায় ঘুমাবে আল্লাহ-ই জানে।
কীভাবে আগুন লাগলো প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। আমার ভাই দিনমজুরি করে দিনে এনে দিনে খায়। কেউ আগুন লাগাই দিলে আল্লাহ বিচার করুক।
ফায়ার সার্ভিস নাটোরের সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, শর্টসার্কিটের কারণে আগুনের সূত্রপাত। আগুনে পরিবারটির ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র সবই পুড়ে গেছে।
রেজাউল করিম রেজা/এমআরআর/জেআইএম