ভাত না খেয়েই ৫৭ বছর পার আনারুল ইসলামের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৬:১৩ পিএম, ২১ মার্চ ২০২২
আনারুল ইসলাম। ছবি-জাগো নিউজ

কথায় আছে মাছে-ভাতে বাঙালি। আমরা বাঙালিরা একবেলা মাছ-ভাত ছাড়া যেন চলতেই পারি না। অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মাছ-ভাত থাকা চাই। তবে জন্মের পর কোনোদিন ভাত খাননি এমন এক মানুষের খোঁজ পাওয়া গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে।

আনারুল ইসলাম নামের ওই ব্যক্তির দাবি, জন্মের পর কোনোদিন ভাতের থালা হাতে করেননি তিনি। এমনকি কেউ বসে ভাত খেলে তার পাশেও যান না। কেউ দাওয়াত দিলে আগেই বলে দেন ভাত খাবেন না।

আনারুল ইসলামের বর্তমান বয়স ৫৭ বছর। তার বাড়ি উপজেলার শ্যামপর ইউনিয়নের শরৎনগর হাজিপাড়া গ্রামে। তিনি স্থানীয় শ্যামপুর ইউ সি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক।

jagonews24

রোববার (২০ মার্চ) সরেজমিন শ্যামপুর ইউনিয়নের শরৎনগর গ্রামে আনারুলের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, ১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন আনারুল ইসলাম। পড়াশোনা শেষ করে প্রথমে একটি স্থানীয় মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। গত ছয় বছর ধরে শ্যামপুর ইউ সি উচ্চ বিদ্যলয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তবে জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসেও কোনোদিন ভাত খাননি তিনি।

কোনো অনুষ্ঠানে গেলেও তিনি আগে জানিয়ে দেন তিনি ভাত খাবেন না। তার জন্য রুটি তৈরি করে রাখতে হবে।

আনারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘জন্মের পর কোনোদিন ভাত খাইনি। ছোটবেলায় স্বজনরা ভাত সামনে দিলেও খেতে মন চাইনি। তারপর থেকে আর ভাত খাওয়া হয়নি। এখন আমার বছয় প্রায় ৫৭ বছর। আমার তিনবেলার খাবারের পছন্দের তালিকায় রয়েছে রুটি, মাংস, আলু ভাজি, মিষ্টি ও পরোটা। এখনো আমার সামনে কেউ ভাত খেলে আমি সরে যাই।’

শ্যামপুর ইউ সি উচ্চ বিদ্যলয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মামুন বলেন, “আমি এই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে পড়ালেখা শুরু করি। তখন থেকেই জানি আনারুল স্যার ভাত খান না। সারাবছর রুটি খেয়ে থাকেন তিনি। তাই স্যারকে সবাই ‘রুটি স্যার’ বলে চিনে।”

jagonews24

কথা হয় আনারুল ইসলামের বড় ভাই হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আনারুল খাত খায় না। ছোটবেলায় তার সামনে ভাতের থালা দিলে রাগ করতো। একদিন মুখে ভাত দেওয়ার পরে সে অচেতন হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর স্বভাবিক হয়। সেই থেকে আমরা তাকে অন্য খাবার খাইয়ে বড় করেছি।’

শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি অনেক আগে থেকেই আনারুলকে চিনি। সে জন্মের পরে কোনোদিন ভাত খায়নি। অন্য খাবার খেয়ে জীবনযাপন করে। তবে সে রুটি বেশি পছন্দ করে। তিনবেলা রুটি খায়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাহমুদুর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘যদিও আমাদের দেশের মানুষ ভাত বেশি খায়, তবে একটা মানুষ ভাত না খেয়েও অন্য খাবার খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। এটা কোনো সমস্যা নয়। হয়তো ছোটবেলায় আনারুলের পরিবারের লোকজন তাকে সেভাবে ভাত খাওয়ার জন্য চাপ দেয়নি।’

সোহান মাহমুদ/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।